যশোরের মণিরামপুরে তৈরি করা হয়েছে আমেরিকা, চীন ও মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের দ¯ত্মা সার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় চুন, গোবর ও এঁটেল মাটি। গত রোববার মধ্যরাতে মণিরামপুর পৌরসভার বাঁধাঘাট এলাকার জরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত বাড়ি থেকে নকল সার বোঝায় ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন। এভাবে দেশের অনেক যায়গায় ছেয়ে গেছে ভেজাল নিন্মমানের সারে। দেশে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন ৪৫টি জৈব সারের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ টিতে ভেজাল পেয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক সারের অতি ব্যবহারের কারণে ফসল ও মাটির ক্ষতি হয়। এই যুক্তি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিবেশবাদীরা জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করে আসছেন। এ ধরনের সার ব্যবহারে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ফসলের মান ও উৎপাদন ভালো হয় বলে পরামর্শ দেওয়া হয়। জৈব সার তৈরির নামে অন্যান্য সার ভেজাল হচ্ছে। ভেজাল সার ব্যবহারে উল্টো ফসলে নানা ক্ষতিকারক উপাদান যুক্ত হচ্ছে। এতে ফসলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকছে না, ফলনও ভালো হচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ভেজাল সারের মধ্যে ভারী বস্তুকণাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। এগুলো মাটি ও ফসলের মধ্যে গেলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এ ছাড়া যেসব কৃষক টাকা খরচ করে এসব সার কিনেছেন, তাঁরাও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভেজাল সার উৎপাদনকারীদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মণিরামপুরে ভেজাল সার কারখানা আবিস্কার হলেও প্রশাসনের অভিযানিক দল কাউকে আটক করতে পারেনি। এমনকি কারখানার মালিককেও সনাক্ত করতে পারেনি।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন অধিদপ্তরের এক সমীড়্গা বলা হয়েছে, দেশে ব্যবহৃত ৩১ থেকে ৫৩ শতাংশ দ¯ত্মা সারে ভেজাল রয়েছে। নকল দ¯ত্মা সার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত হিসেবে নামী-দামী ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করে পরে প্যাকেটজাত করে তা বাজারজাত করা হয়। যেমনটি হয়েছে মণিরামপুরেও।
ভেজাল সার ব্যবহার করায় এক দিকে কৃষক যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্র¯ত্ম হচ্ছেন, অন্য দিকে তাঁরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। জমির উর্বরা ও ফসলের উৎপাদনক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার ক্ষেত্রে ভেজাল সার ভূমিকা রাখছে।
এ বা¯ত্মবতায় ভেজাল সার উৎপাদনের কারখানা শনাক্তকরণ ও সিলগালা করে দেয়ার ব্যাপারটি ইতিবাচক। কৃষি বছরব্যাপী চলে, সেকারণে এ ব্যাপারে গভীর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এক-আধটা কারখানা সিলগালা করে তৃপ্তিবোধের কোন সুযোগ বা অবকাশ নেই। কৃষি বা কৃষককে আমরা যত অবহেলার দৃষ্টিতে দেখিনা কেন মনে রাখতে হবে কৃষিই অর্থনীতির প্রাণ।