সাইফুল ইসলাম : যশোরের বাজারে এখন দেশি ফলের দাপট। বিদেশি ফলের বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। আম, জাম, কাঁঠাল, কলার সাথে দেশে উৎপাদিত বিদেশি ফল ড্রাগনও বিক্রি হচ্ছে দেদার। আপেলের জায়গা দখল করেছে পেয়ারা, হারিয়ে যাওয়া বুনো ফল ডেওয়া ও লটকনও কিনছেন ক্রেতারা। আনারস পাওয়া যাচ্ছে সারা বছর। রোগীর পথ্য ছাড়া আপেল, আঙুর ও বেদনা কিনছেন অনেক কম ক্রেতা।
সাধারণত শীতকালে বিদেশি ফলের সরবরাহ বেশি থাকে দামও থাকে কম। সে সময় সাধারণ ক্রেতারা বিদেশি ফলমুখি হয়। তবে বছরের অন্য সময় দেশি ফলেই তুষ্ট থাকেন ক্রেতারা। আর মধুমাস হিসেবে পরিচিত জ্যৈষ্ঠে রীতিমত ফলের ছড়াছড়ি যায়। এ সময়ে মানুষ ফলের স্বাদ একটু হলেও বেশি গ্রহণ করেন। নাগালের মধ্যেই থাকে আম, কাঁঠাল। ঋতুচক্রে এখন বর্ষাকাল হলেও জ্যৈষ্ঠের ফল এখনো বাজার থেকে ফুরিয়ে যায়নি। তালের শ্বাস, লিচু, তরমুজ, জাম, আনারস, জামরুলসহ বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ফলের দোকানে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা আকারের কাঁঠাল। এছাড়াও দোকানের বাইরের খোলা জায়গায় রয়েছে কাঁঠালের স্তূপ। বর্ষায় কাঁঠালের চল কিছুটা কম হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছেই। ৫০ থেকে শুরু করে ২৫০ টাকার মধ্যে প্রমাণ সাইজের কাঁঠাল মিলছে। বাজারে লিচু শেষের পথে। নেই বললেই চলে। তবে কদিন আগেও লিচুতে ভরপুর ছিল বাজার। জাম ১৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অসময়ে তরমুজ মিললেও দামটা অনেক বেশি। এজন্য বিক্রি হচ্ছে কম। তবে বাজারে এখন গড়াগড়ি যাচ্ছে আম। অন্য যে কোন বারের চেয়ে এবার আমের উৎপাদন বেশি হয়েছে। যার কারণে সহজেই মিলছে আম। দামও তুলনামূলক কম। বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ল্যাংড়া ও হিম সাগর, হাড়িভাঙা, আম্রপালি ৪০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে এক কেজি মিলছে।
অন্যদিকে বিদেশি ফল আপেল ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, কমলা ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি, মাল্টা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, বেদনা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি, আঙ্গুর ৪০০ টাকা কেজি, কালো আঙ্গুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফল ক্রেতা ইমরান হোসেন বলেন, বাজারে এখন দেশি ফল বেশি। এখন বাজারে যে ফল পাওয়া যাচ্ছে সব দেশি ফলই মিষ্টি। এত টাকা দিয়ে কেন বিদেশি ফল কিনবো।
অপর ক্রেতা রিপন হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারে থাকা সব দেশি ফলের দাম কম। বাজারে ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকার ভিতর প্রায় সব ধরনের আম পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দেশি ফলের তুলনায় বিদেশি ফলের দাম অনেক বেশি।
আম বিক্রেতা লাল্টু বলেন, এ বছর সব ধরনের আমের দাম কম আছে। কম দামে পাওয়া যাচ্ছে লতা বোম্বাই ৩০ টাকা কেজি, ল্যাংড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, আম্রপালি ৪০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, মুম্বাই ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি ও অন্যান্য সব ধরনের আম ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
দড়াটানার ফল বিক্রেতা আহাদ আলী জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর দেশি ফলের দাম অনেক কম। আর দাম যাইহোক বাজারে সব ধরনের ফল পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সকলে দেশি ফলের স্বাদ নিতে পারছে। দেশি ফলের অনেক চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ বেশি হওয়ায় ফরমালিনের কোনো আশঙ্কা নেয়। তিনি আরও জানান, বাজারে বিদেশি ফলের দাম বেশি হওয়ায় মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া কিনছে না।
ফল ক্রেতা মোহাম্মদ আরমান হোসেন জানান, বাজারে দেশীয় সব ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে নানা প্রকার আম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশি ফলের দাম অনেক বেশি। মানুষ একান্ত প্রয়োজন না হলেও দর দামও শুনছেন না।