সরকার সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের কালিনচি গ্রামের বাস করেন আব্দুর গনি গাজী। পেশায় তিনি বনজীবী বর্তমানে সবাই তাকে টাইগার গনি নামে চেনেন। জীবিকার তাগিদে সুন্দরবনে যাওয়া জেলে বাওয়ালিদের কেউ বাঘের আক্রমণে আহত ও নিহত হলে তাদের কে উদ্ধার করে আনেন গনি। এজন্যই আব্দুল গনি গাজী এখন টাইগার গনি নামে পরিচিত । তবে এই কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক নেন না স্বেচ্ছায়শ্রমে কাজ করেন তিনি। তিনি ২০০৭ সালে একটি বেসরকারী সংস্থা পরিচালিত ওয়াইল্ড ফরেস্ট টাইগার রেসপনস টিমে চাকরি করতেন। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাঘের মুখ থেকে অর্ধশতধিক মানুষকে ফিরিয়ে এনেছেন টাইগার গনি।
টাইগার গনি বলেন, ছোট বেলা থেকে বাবার সঙ্গে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরতে যেতাম। ২০০৭সালে বন বিভাগকে সহযোগিতা করতে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থায় আমার কাজ করার সুযোগ হয়। ওই সময় আমার এলাকায় একজন মৌয়াল বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। আমি সেই মরাদেহ টি উদ্ধার করতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের সহযোগিতা করি। পরবর্তীতে ফরেস্ট টাইগার রেসপনস টিমের লিডারের দায়িত্ব পাই। এরপর টানা ১২বছর ওয়াইল্ড টিমের সঙ্গে থেকে সুন্দরবনে কেই বাঘের আক্রমনের শিকার হলে আমি তাদের উদ্ধার করে আনি। দীর্ঘ সময়ে আমি ৭০টির বেশি মৃত দেহ বাঘের কাছ থেকে উদ্ধার করে এনেছি। এছাড়া কয়েক জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে পৌছায়ে দিয়েছি।
টাইগার গনি আরো বলেন,২০১৯সালে ওয়াইল্ড টিমের ফরেস্ট রেসপনস টিমের প্রোজেষ্টের মেয়াদ শেষ হলেও আমার কাজ অব্যাহত রয়েছে। যখনই খবর শুনি কোন মানুষ কে বাঘে ধরেছে আমি সঙ্গে সঙ্গে বনে ছুটে যাই। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর ২০২১ বাঘের আক্রমনে নিহত বনজীবী মুজিবুর রহমানের মরাদেহটি উদ্ধার করে এনেছি। সোমবার বিকেলে মুজিবুর রহমান সুন্দরবনের পায়রা টুনির খাল থেকে বাঘে ধরে নিয়ে যায় খবর পেয়ে রেসকিউ টিমের সঙ্গে আমিও সুন্দরবনের যাই। ঘটনা স্থলে পৌঁছনোর পর বাঘের পায়ের ছাপ ও রক্তের দাগ দেখে বনের গভীর থেকে মুজিবুর রহমানের মরাদেহটি উদ্ধার করে আনি। এই অল্প সময়ে বাঘটি মৃতদেহটির একটি পায়ের রুরাটাই খেয়ে ফেলেছে, মূতদেহটি উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছায়ে দিতে পেরেছি এই আমার তৃপ্তি।’
তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, আমার মা বাবা মারা গিয়েছেন্ পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও মানসিক ভারসাম্যহীন এক বোন রয়েছেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে গতবার এইচ সি পাশ করেছে। ছেলেকে সাথে নিয়ে সুন্দরবনে মাঝে মাঝে মাছ ধরতে যেতাম, ছোট একটা ব্যবস্যা শুরু করছিলাম। লোকশানে পড়ে বর্তমানে বেকার রয়েছি।
স্থানীয়রা তাকে এই সাহসী কাজের জন্য শ্রদ্ধা করে। চাকরী না থাকায় বর্তমানে অর্থ কষ্টে দিন যাপন করছেন টাইগার গনি। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষণ ইকবাল হাসান জানান টাইগার গনি এক সময় একটি বেসরকারী সংস্থায় কাজ করতেন। তখন থেকে কেউ বাঘের আক্রমণের শিকার হলে তাকে উদ্ধার করতেন গনি। সে সময় ওয়াইল্ড টিম ও বন বিভাগ থেকে তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষক দেওয়া হয়েছিলো, বর্তমানে আমাদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই, তবে কয়েক দিন আগে বাঘের আক্রমণে নিহত মুজিবুর কে উদ্ধার অভিযানে রেসকিউটিমের সঙ্গে আব্দুল গনি স্বেচ্ছায়অংশ নিয়েছিলেন, সুন্দরবনে বর্তমানে ওয়াইল্ড টিমের কোন কার্যক্রম নেই, তবে ভবিষ্যতে কোন সুযোগ হলে টাইগার গনির জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।