মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট : ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনা খানজাহানের বসতভিটা খনন কাজ শুরম্ন হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিখ্যাত মুসলিম শাসক খানজাহান আলী (রহ.) এর বসতভিটা খনন করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন এই খনন কাজের উদ্বোধন করেন।
এসময়, অধিদপ্তরের খুলনার সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস, বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রম্নবাইয়া তাসনিম, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আখতারম্নজ্জামান বাচ্চু, জেলা জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মোহাম্মাদ যায়েদ আল আমীন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার মোসা. আইরীন পারভীন, মো. হাসানুজ্জামানসহ স্থানীয় গণ্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অধিদপ্তরের এই খনন কাজে সুলতানি আমলে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা, ভূমির শ্রেণি বিন্যাস, স্থাপনা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ, যাতায়াত পথ, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
৪৫দিন ব্যাপী এই খনন কাজে প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের ১০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেছেন। এদের পাশাপশি খনন কাজে দড়্গ শ্রমিকরাও অংশ নেবেন খনন কাজে। খনন শেষে প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণ মানুষকে জানানো হবে বলে জানিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে খানজাহান আলী (রহ) এর নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ১৭টি স্থাপনাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়। ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে মাত্র ৩০০ মিটার উত্তরে খানজাহান আলী (রহ) এই বসত ভিটাটি রয়েছে।
২০০১ সালে এখানে প্রথমবার প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। এরপর ২০০৮ থেকে এ পর্যšত্ম মোট ১২ বারের খননে ঢিবিটিতে বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে সাড়ে ৬০০ বছর আগের উলুঘ খান জাহান আমলের নানান স্থাপনা ও ইট বিছানো সড়ক ছাড়াও আগে ও পরের বিভিন্ন যুগের স্থাপনা এবং বসতির নিদর্শন রয়েছে।
এখানে পাওয়া স্থাপত্য, মৃৎপাত্র, নানা তৈজস ও উপকরণ থেকে ধারণা করা যায়, সেই সময়ে এখানে বসবাসকারীদের একটি উন্নত রম্নচিবোধ ছিল। নির্মাণশৈলী ও শৈল্পিকতায় তার প্রকাশ পেয়েছে। খান জাহানের বসতভিটা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম এক নিদর্শন, যার পাশে এখন টিকে আছে প্রায় সাড়ে ৬০০ বছর আগে নির্মিত ইটের তৈরি প্রাচীন রা¯ত্মা। খান জাহানের বসতভিটা ছাড়াও স্থানটি মধ্যযুগের অন্যতম টাঁকশাল নগরী খলিফাতাবাদ শহরের অংশ হিসেবে পরিচিত।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, খান জাহানের বসতভিটা হিসেবে সংরড়্গতি এই প্রত্নস্থলটিতে বেশ কয়েকবার খনন করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ের খননে প্রাচীন দেয়াল, মেঝে, পয়োানিষ্কাশন প্রণালির নালা, পোড়ামাটির তৈরি পাইপসহ বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন, প্রদীপদানি, পোড়ামাটির পুঁতি, লাল, কালো ও ধূসর বর্ণের মৃৎমাত্র, পেস্নট, গস্নাস, পিরিচ, নল, জালের গুটি, টাইলস, অলংকৃত ইটসহ বিভিন্ন প্রত্নব¯ত্মু পাওয়া গেছে।