১৭ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাগেরহাটে বালির বাঁধ নির্মাণের শুরুতেই ফাঁটল
বাগেরহাটে বালির বাঁধ : নির্মাণের শুরুতেই ফাঁটল

কামরুজ্জামান, বাগেরহাট : বাগেরহাটের সদর উপজেলার ভাতছালা- মুনিগঞ্জ বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে বালি। যার কারনে নির্মাণ কাজের শুরুতেই ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর যেনতেন করে বালির বাঁধের উপর মাটি দিয়ে ঢেকে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।


স্থানীয়রা জানান, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই কয়েক জায়গা ধ্বসেও গেছে বাঁধটির। বাঁধ নির্মাণে বালি এবং নদীর চরের বালি মাটির ব্যবহার ও বাঁধের কাছ থেকে মাটি নেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা । কাজ শেষের আগেই বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় কোটি টাকায় নির্মানাধীন এই বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাগেরহাট কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, ভৈরবের পানি থেকে মুনিগঞ্জ-ভাতছালাবাসীকে রক্ষার জন্য ষাটের দশকে নাজিরপুর উপ-প্রকল্পের অধীনে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঝড়-জলচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাঁধটি বেশ নিচু হয়ে গেছে। যার ফলে গেল কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথিতে নদীর পানি উপচে ভাতছালা, মুনিগঞ্জ, ভদ্রপাড়া ও চরগ্রাম প্লাবিত হত।

স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে গেল বছরের নভেম্বরে ভাতছালা থেকে মুনিগঞ্জ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এই বাঁধটি সংস্কার শুরু করে পাউবো। ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পূর্বের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফিট উঁচু করা হবে বাঁধটি। জরুরি ভিত্তিতে ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) পদ্ধতিতে ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলাম এই কাজ বাস্তবায়ন করছেন। চলতি মাসেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, মাত্র ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাঁধের পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের সময় কিছুটা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন পাউবোর এক কর্মকর্তা।


সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে বালুর ব্যবহার করা হয়েছে। চরগ্রামের আবুল বাশারের বাড়ির অদূরে ধ্বসে গেছে। ফাটল ধরেছে কয়েক জায়গায়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বাঁধের একদম গোড়া থেকে (বাঁধ লাগোয়া) ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে মাটি খুড়ে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে বৃষ্টি ও জলোচ্ছাসে বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অতিরিক্ত গভীর করে মাটি নেওয়ায় বাধের পাশের বাসিন্দা ফাতেমা জান্নাতের ভবনের সামনের উঠানও ফাটল ধরেছে। অনেকের গাছ ও মাটি ধ্বসে গেছে। এই বাঁধ সংস্কার ও পুনঃনির্মান কাজের কোন তথ্য তাদের জানানো হয়নি এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।


বাঁধের জন্য স্থানীয় বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য আসাদুজ্জামান মোহন, তার চাচাতো ভাই সুমন, চরগা গ্রামের ছোটসহ কয়েকজন জানান, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকেও জোরকরে বালিমাটি কেটে নেয়া হয়েছে। চরগ্রাম গ্রামের শাহ জাহান শেখ বলেন, বাঁধের একদম গোড়া থেকে মাটি কেটেছে। এই বাঁধ টিকবে কি করে? নদীর পাড়, চর কেটে নিয়েছে। সেই মাটি-বালি দিয়ে বাঁধ করলে, কোন দিন থাকবে না। চরগ্রাম গ্রামের আবুল কালাম গাজী বলেন, বালি দেওয়ায় দুই তিন জায়গায় ডেবে গেছে।


স্থানীয় ইউপি সদস্যের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পাওয়া মো. মারুফ হোসেন ফকির ওরফে ছোট বলেন, এই রাস্তাটা আমাদের খুব দরকার ছিল। স্থানীয় মোহন মেম্বর বলায় আমি আগা-মাথা মাটি কাটার সময় সাথে ছিলাম। সবাই স্বেচ্ছায় এই কাজের জন্য মাটি দিচ্ছে। কাউকে চাপ দেওয়া হয়নি।


বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ২২ বছর পর এই বাঁধের সংস্কার হচ্ছে। এটা ইমারজেন্সি কাজ। এখানে মাটি কিনে নেওয়ার কোন বরাদ্দ সিডিউলে নেই। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমরা কাজটা করছি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দরপত্র অনুযায়ী এই বাঁধটা ৩ দশমিক ৫ লেভেলে হবে। যাতে কোথাও দুই ফুট, কোথাও চার ফুট উঁচু হবে। জরুরি ফান্ড থেকে এই কাজটি করা হচ্ছে। দরপত্রে বলা আছে, মাটি ও লোকাল ম্যাটেরিয়াল দিয়ে কাজটি করতে হবে। এর জন্য জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের কোন ব্যাবস্থা আমাদের নেই। তিনি আরও বলেন, বাঁধে বালির ব্যবহার করা যাবে। তবে মাটির পরিমানই বেশি থাকবে। বালিটা আমরা মাঝেই দেই। তবে চেষ্টা করি যত কম দেওয়া যায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram