মো. কামরুজ্জামান,বাগেরহাট : এবার বাগেরহাটে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির খামখেয়ালিপনায় প্রায় দুশ’ বিঘা জমির ধান নষ্ট হওয়ায় উপক্রম হয়েছে। এতে ড়্গতির মুখে পড়েছেন দুই শতাধিক কৃষক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার হাড়িখালী ডবর খালী ক্ষুদ্র পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নামে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি তিনটি গেট পরিচালনা করে আসছে। এই সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ আলী গত শনিবার গভীর রাতে হাড়িখালী ¯স্নুইজ গেট দিয়ে নদীর লবণ পানি প্রবেশ করান। ফলে প্রায় দুই হাজার বিঘার পুটিমারী বিলের মধ্যে দুশ বিঘার ধান লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই বিলের মধ্যে চাটির অধিক ছোটবড় খাল রয়েছে। এই বিলের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া দড়াটানা নদী। দড়াটানা নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করালে সব জমি লবণ পানিতে প্লাবিত হয়।
পুটিমারী বিলের খাল আটকে বাঁধ দিয়ে মিষ্টি পানির সংরক্ষণ করে ধান চাষ করেন কৃষকেরা। প্রভাবশালী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ আলী লবণ পানি প্রবেশ করানোয় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোববার এবিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকেরা উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিনের কাছে গেছে তিনি সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় দেন।
সেখানে সোমবার বিকালে হাজির হন উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রম্নবাইয়া তাসনিম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. রেজাউল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভিন, উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তন্ময় দত্ত, বাগেরহাট পৌরসভার ১ নং কাউন্সিলর শামিম হাসান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর আসমা আক্তার, কাড়াপাড়া নিউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মহিতুর রহমান পল্টন, কাড়াপাড়া ইউপি সদস্য মুকুলসহ শতাধিক কৃষক।
কৃষকরা জানান, উপজেলা থেকে ধানের বীজ সংগ্রহ করে বিজতলায় চারা বানিয়ে ধান চাষ শুরম্ন করি। এতে আমাদের বিঘা প্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধানের মোচা আসা শুরম্ন করেছে। এই সময় পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ আলী রাতের আঁধারে ¯স্নুইজ গেট দিয়ে লবণ পানি প্রবেশ করানোয় জমির ধান লবণে পুড়ে পচে যাচ্ছে। তারা বলেন, চিংড়ি চাষের জন্য নদীর পানি উঠানোর কারণে লবণ পানিতে পচে যাচ্ছে কষ্টের ফসল।
এর ফলে দুই শতাধিক কৃষকের ৫০ লাখ টাকার উপরে ক্ষতি হবে। তবে ২০-২৫ দিন পরে পানি প্রবেশ করালে ধানের ক্ষতি হতনা বলে দাবি কৃষকদের। লবণ পানিতে কৃষকের ধান পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দু’তিন দিনের মধ্যে এসব ধানের গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাবে বলে দাবি কৃষকদের।
পুটিমারী বিলের কৃষক মিরাজ বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় আমরা আগ্রহ নিয়ে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ¯স্নুইজ গেট থেকে লবণ পানি প্রবেশ করার ফলে আমাদের ধান পচতে শুরম্ন করেছে।
একই মাঠের আকরাম হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে অনেক কষ্ট করে উপজেলা থেকে ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় ধানের বীজ এনে ধান চাষ করি। মোহাম্মদ আলীর খামখেয়ালির কারলে আমাদের আজ পথে বসার উপক্রম হয়ে গেছে।
কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মহিতুর রহমান পল্টন বলেন, ক্ষুদ্র পানিসম্পদ সেক্টরে হাড়িখালী ¯স্নুইজ গেগের একটি কমিটি আছে। তারা অসাধু উপায়ে লবণ পানি প্রবেশ করানোয় দুই থেকে তিনশ বিঘা জমির ধান বিনষ্ট হয়েছে। যারা এই কাজটি করেছে আমি তাদের শা¯িত্মর দাবি করি। এবং কৃষকের ক্ষতি পূরণের লক্ষে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে কাজ করছি।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তন্ময় দত্ত বলেন, আমরা সকাল থেকে বিভিন্ন স্পট পর্যবেক্ষন করে দেখলাম যে, হাড়ীখালী ¯স্নুইজ গেট থেকে পানিটা তুলছে। এর আশেপাশে যে, জমিগুলি আছে সেগুলি প্লাবিত হয়েছে। এখনই আমরা কার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে সেই তালিকা করছি। তিনি বলেন, আমরা দেড় থেকে দুইশ বিঘা জমির ক্ষতির আশংকা করছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রম্নবাইয়া তাসনিম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা পুরো এলাকা সরেজমিনে দেখবে এবং ক্ষতির পরিমান নিরূপন করে আমাদেরকে জানাবে এবং এই গেট থেকে আর যাতে লবণ পানি ঢুকাতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলীর মোবাইল ফোনে বার বার ফোন দিলেও ফোনে স্ইুচ বন্ধ পাওয়া গেছে।