সমাজের কথা ডেস্ক : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সমাজের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটি ভুলে গেলে চলবে না যে একটি গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে। পৃথিবীর সবাই যে তাতে অংশগ্রহণ করছে, তেমনও নয়। তবে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে। তারা সবখানে আঘাত করার চেষ্টা করছে। গ্লোবাল ক্যাম্পেইন যে চলছে– এটি আমরা বিদেশি কূটনীতিকদের আজকে বলেছি।’
গ্লোবাল ক্যাম্পেইন কারা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দেশ করছে এটি আমি বলবো না। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান করছে এবং সে প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরনটি কী—তা আপনারা ভালো জানেন।’
‘এটি আমাদের মেনে নিতে হবে যে যারা এটি করছে—তাদের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছানোর ক্ষমতা আমাদের থেকে বেশি’ বলে তিনি জানান।
মিডিয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে অনেকে বিদেশে যেমন জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিল বা যুক্তরাজ্যে বক্তব্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা তুলিনি। এটি আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে তুলবো। সে কারণে এখানে আলোচনা করে লাভ নেই। ব্রিটেনের সঙ্গে এ বিষয়টি তুলবো। অত্যন্ত একপেশে রিপোর্ট তারা দিয়েছে। চারটি নির্বাচনকে তারা মোটামুটি এক পর্যায়ে ফেলেছে। লিখেছে তিনবার পুনর্র্নিবাচিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনগুলো কী মানের সে বিষয়ে একটি শব্দও সেখানে নেই। ১৫০০ ছেলেমেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে একটি শব্দও সেখানে উল্লেখ নেই।’
কোন দেশের মিডিয়া পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট। এটি প্রধানত ভারতীয় মিডিয়া। কিন্তু এর বাইরেও অনেক মিডিয়ায় ভারতের মিডিয়ার বক্তব্যকে রেফারেন্স করে সংবাদ দেওয়া হয়েছে।’
কূটনীতিকদের যা বলা হলো
ব্রিফিংয়ে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ব্রিফ করেছি, যাতে ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়। কারণ ভুল ধারণা সৃষ্টি করার মতো পরিবেশ আছে। বিশেষ করে মিডিয়ার একাংশ, কোন দেশের সেটা বলছি না– তারা যতটুকু পারা যায় খারাপ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সমাজের অংশ এবং সরকার এটি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোনও মানুষ ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে নিগৃহীত হবে না এবং এটি আমরা নিশ্চিত করবো।’
সরকারের চার মাস সময়কালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য কয়েকবার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার, রাজনীতিবিদ, শিক্ষার্থীরা সেটি প্রতিহত করেছে বলে তিনি জানান।
দুই-একটা ঘটনা যে ঘটেনি—বিষয়টি সেরকম নয়। তবে এ ধরনের ঘটনা এর আগের সরকারের সময়েও ঘটেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি খারাপ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা দেশের ভেতরে ও বাইরেও আছে। এটি যেন সফল না হয় আমরা তা চেষ্টা করছি।’
মমতা ব্যানার্জি
মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য আমরা মমতা ব্যানার্জির মতো দেখতে চাই। উনি এ বক্তব্য কেন দিলেন এটি আমি বুঝতে পারছি না। তার যে নির্বাচনি এলাকা (পশ্চিমবঙ্গ), সেখানে আমি দুবছর ছিলাম। আমি তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। তার বাসায়ও আমার যাতায়াত ছিল। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটি তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়। রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এটি তার জন্য সহায়ক হবে না।’
৫ আগস্টের আগে এবং পরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এক না। পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক রেখে আমরা ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক, ভালো, সুসম্পর্ক চাই বলে তিনি জানান।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে ভারতের কী স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে’, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি পরিমাপ কীভাবে করবেন। এখন ভিসা বন্ধ আছে এবং এ কারণে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। আবার এ কারণে অনেকের সুবিধাও হচ্ছে। আমি গতকাল (রবিবার) আমার চেকআপের জন্য একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তাদের সব সিট ভর্তি। এটি ভারতের স্বার্থে যায় কিনা দেখতে হবে।’
ভারতের রাজনীতিবিদদের কোনও বার্তা দিতে চান কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বার্তা দিতে চাই সেটি হলো—এই সরকার কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না এবং হিন্দু বা মুসলিম বলে কথা নয়, আমরা সবাইকে সমান চোখে দেখবো। আমরা এই বার্তা সবাইকে দিতে চাই, শুধু কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নয়।’