১৩ই জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন আর্চার দম্পতি
বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা বিদেশে পাড়ি দেয় কেন?

ক্রীড়া ডেস্ক : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত জুটি রোমান সানা-দিয়া সিদ্দিকী। খেলতে খেলতে প্রেম। তারপর বিয়ে। এখন তো ‘উন্নত জীবনের লক্ষ্যে’ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। খেলার মাঝপথে কিংবা শেষে এসে বিদেশে থিতু হয়েছেন এমন ক্রীড়াবিদদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এক যুক্তরাষ্ট্রেই খেলোয়াড় পরিচয়ে আছেন প্রায় শতাধিক! সেই যে ৮০-৯০ দশক থেকে শুরু হয়েছে, এখনও তা চলমান।

দেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেখানে এখনও ক্রীড়া উন্নয়নে অনেকটাই বেহাল অবস্থা। ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরে অন্য খেলাগুলো চলছে অনেকটাই ধুঁকে ধুঁকে! সাফল্য বয়ে আনলেও সেভাবে অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি কমই মিলছে। নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সুযোগ পেলেই তাই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন কেউ কেউ। রোমান-দিয়া যেন দেশে ছেড়ে গিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের সেই রুগ্ন চিত্রের কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন।

১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দেশের প্রথম অলিম্পিয়ান সাইদুর রহমান ডনকে নতুন করে প্রশ্ন রেখেছিলাম, কেন দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন? দেশের দুবারের দ্রুততম মানব ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে আক্ষেপের সুরে উত্তর দিয়েছেন, ‘আমি দেশের অ্যাথলেটিক্সকে কিছু দিতে চেয়েছিলাম। খেলা ছেড়ে সংগঠক হয়ে কাজও করেছিলাম। কিন্তু একপর্যায়ে কাজের সেভাবে পরিবেশ পাইনি। আমি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছি। পাতিয়ালা থেকে সর্বোচ্চ কোচিং ডিগ্রি নিয়েছি। নানান জায়গার অভিজ্ঞতা দেশের অ্যাথলেটিক্সে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তা পারিনি। তাই সবকিছু চিন্তা করে বিদেশের জীবন বেছে নিই। শুধু আমি একা নই, বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ১০০ ক্রীড়াবিদ আছেন শুধু আমেরিকাতেই।’
আরও যুক্তি তুলে ধরে ডনের কথা, ‘যেখানে খেলোয়াড়দের সেভাবে ভবিষ্যৎ নেই। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেতে আবেদন করতে হয়, যেটা বলবো আমি এক ধরনের ভিক্ষা চাওয়ার মতো। সেখানে ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতি হওয়া কঠিন। আমার মনে হয় এই সময়ে এসে এখনও যারা হতাশ হয়ে পড়েন নিজের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, তারা সুযোগ পেলেই উন্নত জীবনের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি দেন।’

আর্চারদের মধ্যে অসীম বিশ্বাস প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন। নিউ ইয়র্ক থেকে দেশ ছাড়ার কারণ আবারও তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমি যখন দেশে আর্চারি করতাম, সেসময় ৮ হাজার টাকা পেতাম। তা একপর্যায়ে বেড়ে হয় ২০ হাজারে। এই টাকা দিয়ে একজন ক্রীড়াবিদ কীভাবে জীবনধারণ করবে বলুন। জাতীয় দলে খেলেও তো সেভাবে টাকা পাওয়া যায় না। আমাদের ভবিষ্যৎটাই কী, কেউ তো বলতে পারে না। তাই সুযোগ পেয়ে ফেডারেশনকে বলে বিদায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসে গ্রিনকার্ডও পেয়েছি। এখানে এখন আমি অনেক ভালো আছি। ড্রাইভিং করে ভালো টাকা উপার্জন করছি। পরিবারকে ভালো সহায়তা করতে পারছি। হয়তো খেলাটা ভুলে যেতে হচ্ছে। তবে কিছু করার নেই। আমরা তো দেশে খেলে ভালোভাবে জীবনধারণ করতে পারবো না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অন্য খেলোয়াড়রা নিজেদের ক্ষোভ-হতাশা লুকাতে পারেননি। সাবেক ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন এলিনা সুলতানার প্রশ্ন, ‘দেশে থেকে খেলোয়াড়দের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা দিতে পারেন না? এটি সব ফেডারেশনেরই ব্যর্থতা। এটা ওভারকাম করতে পারবেন না, শুধু খেলোয়াড়দের ওপরে আদেশ-নির্দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে।’

টেবিল টেনিসে আরেক সাবেক চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরী বলতে চাইছেন, সবাই নিরুপায় হয়ে দেশ ছাড়ে, ‘যে বা যারা দেশ ছেড়ে যায়, তারা কেউ শখ করে যায় না, যোগ্যতার অবমূল্যায়ন আর তার সঙ্গে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের বাধ্য করে এরকম কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলাতে কত বেতন পান খেলোয়াড়রা? তার ওপর যতদিন খেলবেন ততদিন বেতন, এরপর কী হবে কেউ জানে না। চাকরির নিশ্চয়তা নেই খেলা থেকে অবসরের পর, নেই কোনও পেনশন। তাহলে কেনই বা কোনও কিছুকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকা, কীসের আশায়! আমার তো মনে হয়, যদি সব যোগ্য খেলোয়াড়ের সুযোগ, অর্থ ও উপায় থাকে তারা সবাই বিদেশেই পাড়ি দেবে উন্নত ভবিষ্যতের আশায়।’

জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে খেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া বাংলাদেশের কোচ মওদুদুর রহমান শুভ বাস্তব অবস্থা বুঝে হতাশা নিয়ে লিখেছেন, ‘বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার পরও হকি জুনিয়র দল তেমন কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না। ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়া বাকি সবাই আর্থিকভাবে অনেক দুর্বল। যে টাকা তারা পায়, অনেক সময় সেটা দিয়ে খেলার সরঞ্জাম কেনাও কষ্টকর হয়ে যায়। অন্য খেলায় অফিস দলগুলো এগিয়ে এলে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির নিরাপত্তা থাকলে বাংলাদেশ অনেক খেলাতেই ভালো করতে পারবে। জাতীয় দলে যারা খেলে তারা চাকরির পরীক্ষায় অন্যদের সঙ্গে টিকতে পারবে না। তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখতে হবে। কারণ তারা পড়াশোনা স্যাক্রিফাইস করছে দেশের হয়ে খেলার জন্য। সুতরাং খেলা পরবর্তী জীবনের নিশ্চয়তা পেলে ভালো খেলোয়াড়েরা দেশেই থাকবে এবং খেলাতে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবে।’

জাতীয় ভলিবল দলের সাবেক অধিনায়ক সৈয়দ আল জাবির খেলা ছেড়ে ফ্রান্স প্রবাসী। সেখান থেকে লিখেছেন, ‘প্লেয়ার দেখেই স্পন্সর আসে। কিন্তু টাকা যায় কর্মকর্তাদের পকেটে। যে দেশে প্লেয়ারদের থেকে কর্মকর্তার ইনকাম বেশি, ওখানে না থাকাটা ভালো না? আমার মতে তারা (রোমান-দিয়া) ভালো ডিসিশন নিয়েছে।’

প্রায়ই দাবাড়– মেয়ের জন্য স্পন্সর খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম হয় বাবা মেহেদী প্রণয় তূর্যের। তার ক্ষোভ, ‘এই দেশে ক্রিকেট ছাড়া আর কোনও খেলোয়াড় কি দরকার আছে?’

ক্ষোভ-হতাশা দূর করে ক্রীড়াবিদদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে মনোযোগ কে দেবে তাহলে?

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram