সাইফুল ইসলাম : যশোর শহরের মনিহার এলাকার খুলনা বাসস্ট্যান্ড মোড় মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে ছোট্ট একটা দোকান। বিক্রি হয় আলু—পুরি। ভিন্ন স্বাদের জন্য এ আলুপুরির পরিচিতি আছে শহরময়। তেলের কড়াই থেকে তোলার সাথে সাথে ক্রেতারা এক প্রকার কাড়াকাড়ি করে নিয়ে নেয় এ মজাদার পুরি। বিশেষ স্বাদের এ পুরি টানা দীর্ঘ ৩৫ নছর ধরে একই স্থানে তৈরি করছেন করছেন নাজির শংকরপুর এলাকার বশির শেখ।
প্রতিদিন ভোর থেকে ব্যস্ততা শুরু হয় বশির শেখের। ছোট দোকানে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাস্তার উপর লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আলু—পুরি কেনেন ক্রেতারা। দোকানদার বশির শেখ আলু—পুরি তৈরি করেন ও তার দুই সহযোগি বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল¬াহ আল ফুয়াদ বলেন, মনিহার মোড়ের এ আলু—পুরি নামকরা সবার কাছে জনপ্রিয় ও খেতেও সুস্বাদু। পুরির সাথে বুটের ডাল ফ্রি থাকায় এটি খেতে আরও ভালো লাগে। আমরা মাঝেমধ্যে বন্ধুরা এ আলু—পুরি খেতে আসি।
অপর একজন আর এন রোডের মটরপার্টসের কর্মচারী সজিব হোসেন বলেন, অনেকদিন থেকে এ দোকানে আলু—পুরি খেয়ে আসছি। বছর খানিক আগে প্রতি পিস তিন টাকা ছিলো এখন পাঁচ টাকা করে বিক্রি হয়। অন্য দোকানের পুরির চেয়ে এটি অনেক স্বাদের।
স্থানীয় দোকানদার শেখ কিবরিয়া বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এ দোকান থেকে আলু—পুরি খেয়ে আসছি। আগের সেই স্বাদ এখনও আছে। এখানে স্থানীয়রা ছাড়াও দূর—দূরান্ত থেকে অনেকে পুরি ও চপ খেতে আসে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে সুনাম রয়েছে।
আলু—পুরি তৈরি করতে সহযোগিতা করেন বশির শেখের ভাইপো ও ভাগনে। বশির শেখের ভাইপো শুকুর আলী বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে চাচার দোকানে আছি। আলু—পুরি বিক্রি করতে করতে বড় হয়েছি। আশেপাশের মানুষসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন এখানে আলু—পুরি ও বিভিন্ন রকমের চপ খেতে আসে।
বিশেষ পুরির কারিগর বশির শেখ জানান, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আলু—পুরি ও এর পাশাপাশি বেগুনি —পিঁয়াজু বিক্রি করি। ৩৫ বছর আগে ৪টি আলু—পুরি ১ টাকায় করে বিক্রি করতাম। তারপর একটি আলু—পুরি ৫০ পয়সা, তারপর একটি আলু—পুরি ১ টাকা । তারপর ২, ৩, এখন ৫ টাকা করে বিক্রি করি।
প্রতিদিন শুধু আলু—পুরি তৈরি করতে ২০ কেজি ময়দা, ৫ কেজি ব্যাসন ২০ থেকে ২৫ কেজি আলু কিনতে হয়। এছাড়াও ৫ কেজি ডাল এক কেজি ময়দায় ৮০ থেকে ১০০ পিস পুরি হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার পুরি বিক্রি করেন। এই হিসাবে প্রতিদিন ৪ জন কর্মচারীসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা লাভ হয়।’
প্রায় ৪০ বছর আগে একই জায়গায় মন্টু মিয়ার দোকানে আলু—পুরি তৈরি করতেন তিনি। ৩৫ বছর আগে নিজে দোকান দেন। এক সময় জায়গার ভাড়া দিনে ১ টাকা করে দিতেন। এরপর ৭০০ টাকা পর্যন্ত মাসে দিয়েছেন। তবে এখন নির্দিষ্ট কোন ভাড়া দেয়া লাগে না, মসজিদ ফান্ডে সুবিধামত টাকা দিলেই চলে।
বশির মিয়া বলেন, ‘আলু—পুরি সবাই তৈরি করতে পারে না। এরজন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। শেষ জীবন পর্যন্ত আলু পুরিই বিক্রি করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তুর দাম বেড় যাওয়ায় বাধ্য হয়ে আলুর পাশাপাশি ডালপুরি বিক্রি করছি।