মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর : বরফ সংকটে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মাছের মোকাম যশোরের মণিরামপুরের মাছের আড়ৎ ব্যবসায়ীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে বরফ সংকটের কবলে পড়েছেন আড়ৎ ব্যবসায়ীরা। এতে ক্রয়কৃত মাছ দেশে ও দেশের বাইরে পাঠাতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। সহসায় সংকট উত্তরণ না হলে মাছের এই খাতে বিপর্যয় ঘটবে বলে আশংকা করছেন ব্যবসায়ীসহ মাছের খামার মালিকরা।
জানাযায়, দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জেলায় ছাড়াও এ মোকামের মাছ ভারতের তিন রাজ্যে যায়। বরফ সংকটে দেশের বাইরে পাঠানো তো দূরের কথা দেশের মধ্যেও সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে তীব্র তাপদাহ ও পানির অভাবে ঘেরে মাছ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাছ মারাও যাচ্ছে। এ কারণে ঘের মালিকরা মাছ আড়তে নিয়ে আসলেও তা সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে ব্যবসায়ীসহ ঘের মালিকরা লোকসানের কবলে পড়ছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানা যায়, উপজেলার চার হাজার ৮১০ হাজার মাছের খামার, ১০৬৪৩ পুকুর, ৫ বাওড় ও দুই হাজার ৫৮৫ গলাদা চিংড়ির ঘের হতে বছরে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। এ উপজেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা নয় হাজার ২০০ মেট্রিক টনের বিপরীতে উদ্বৃত্ত মাছ ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। বাইরে মাছ পাঠাতে হলে বরফের প্রয়োজন। উপজেলায় পাঁচটি বরফকল সচল থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বরফ উৎপাদন হচ্ছে। এ কারণে মাছ কিনে চরম বিপাকে পড়েছেন আড়ৎ ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিন পৌরশহরের মাছের মোকামে গেলে চোখে পড়ে ক্রয়কৃত মাছ আড়তের ভিতরে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। এসময় আড়ৎ ব্যবসায়ী আহাদ আলী বলেন, ভোরে মাছ কিনে এভাবে মেঝেতে ঢেলে রাখা হয়েছে। বরফের সন্ধানে যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় লোক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও বরফের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আর কিছু সময় পার হলে মাছে পচন ধরবে। এতে করে চরম লোকসানে পড়তে হবে।
মণিরামপুর পাইকার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজিম বলেন, এই মোকামের মাছ ভারতের তিন রাজ্য ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবাংলায় যায়। এছাড়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, আখাউড়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যায়। বরফ না হলে কোনভাবেই মাছ পাঠানো সম্ভব হয় না।
আড়ৎ ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার ৫টি বরফ কারখানায় চাহিদার তুলনায় অনেক কম বরফ উৎপাদন হচ্ছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) কোন কারখানায় বরফ উৎপাদন হয়নি। এ কারণে মাছ কিনে চরম বিপদে পড়েছেন তিনি।
পৌরশহরের আনিছুর রহমান বরফ কলের মালিক আনিছুর রহমান জানান, বরফ উৎপাদনে টানা ১২ ঘন্টা বিদ্যুতের দরকার হয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ মিলছে না। বরফ সংকটে শুধু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। লোকসানের মুখে পড়েছেন মাছের খামারিরাও।
প্রদীপ সরকার, দ্বীন মোহাম্মদ, অলোক হালদার, পলাশ অধিকারি, আলা উদ্দীনসহ একাধিক ঘের মালিক জানান, তীব্র্র তাপদাহে পানি গরম হওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে। এ কারণে মাছ ধরে বাজারে নিয়ে আসলেও ক্রেতা কম। এতে তারা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (যপবিস-২) এর ব্যবস্থাপক হাদিউজ্জামান জানান, এ সমিতির আওতায় রাত-দিন গড়ে ১১৫ হতে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু বিপরীতে মাত্র অর্ধেক পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও সংকট উত্তরণে করণীয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে।