বিশেষ প্রতিনিধি : ঈদকে সামনে রেখে মাদকের বিস্তার বাড়ছে। বাংলাদেশ-ভারত রুটে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেসের কম্বলের মধ্যে আসছে মাদক। গতকাল সোমবার কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভায় ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
মনিহার এলাকায় নির্মাণাধিন সড়কের উপর দাড়িয়ে থাকা বাসসহ অন্যান্য যানবহন সরিয়ে নেয়া, খাজুরাস্ট্যান্ডসহ যশোর-ঢাকাগামী পরিবহনের স্টপেজ এলাকায় বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করার নিদ্ধান্ত হয় সভায়। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঈদের আগে-পরে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সভায় জানানো হয়।
বাংলা নববর্ষ পালন যাতে বর্ণাঢ্য, সুষ্ঠ ও সুন্দর করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও স্কুল কলেজ চলাকালীন সময়ে শহরে যাতে কোচিং চালু না থাকে সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, বিজিবি, র্যাব ও আনসারের প্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদে যান চলাচলে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। ঈদ যাত্রা নিরাপদ করার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট থাকতে বলা হয়। যানজট ও ভোগান্তীহীন ঈদযাত্রার জন্যে সংস্কার চলমান সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয় সড়ক ও জনপথকে। বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ, পৌরসভা ও জেলা পরিষদের সম্মিলিত চেষ্টায় সড়ক-মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা বাস ট্রাক পিকআপ, দোকানের মালামাল, নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় জানানো হয়, যশোর-ঢাকা রুটে ২৪টি নামে ১৪০টি গাড়ি চলে। নির্বিঘ্নে ওই গাড়িসহ রাস্তায় চলাচলে সবাই যেনো নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনা রোধে সতর্ক থাকা, জনসচেতনায় মাইকিং করা ছাড়াও অতিরিক্ত গতির মোটর সাইকেল চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
আসছে ১ বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়। সকলের অংশ গ্রহণে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। তবে রমজানের পবিত্রতা ও শুক্রবারের বিষয় মাথায় রেখে এ জাতীয় কর্মসূচি বেলা ১১টার মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যাপরে একমত হয় সভার উপস্থিত সবাই।
প্রতি মাসের সভার মতো এ সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মতামত দেন কমিটির সদস্যরা। ঈদ সামনে রেখে মাদকের বিস্তার বাড়ছে বলে জানানো হয়। এ কাজে বাংলাদেশ ভারতে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেসটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আলোচিত হয়। ফলে র্যাব-বিজিবি-পুলিশ-কাস্টমসহ সমন্বিত বাহিনীর বার বার অভিযানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তও হয়। এর আগের দুটি অভিযানে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের বিষয়টিও উঠে আসে সভায়। এ সময় জানানো হয় জেলায় অপেক্ষাকৃতভাবে অপরাধ বেড়েছে, সেই সাথে মাদকের ব্যবহারও বেড়েছে। গত মার্চের পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়, ওই মাসে জেলায় ৩৩২টি মামলা হয় এর মধ্যে মাদক সংক্রান্ত মামলা ছিল ১৮৩টি। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ৩১৮টি মামলা ছিল এর মধ্যে মাদক সংক্রান্ত ছিল ১৬৪টি।
সভায় জেলায় শিক্ষা বিস্তারে কোচিং সেন্টারের বাঁধা ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন কোচিং চালু থাকায় অনেক শিক্ষার্থী স্কুল কলেজে না গিয়ে কোচিং মুখি হচ্ছে বলে জানানো হয়। এ সময় সিদ্ধান্ত হয় শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু অবস্থায় কোচিং সেন্টারগুলি যাতে না চলে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়া জেলায় ছুরি চাকুর আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রয়োজনে ছুরি-চাকু উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। তাছাড়া কোনোভাবেই যেনো বাজার অস্থিতিশীল না হয় সে ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করাসহ নিয়মিত অভিযান চলবে বলেও আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়।