সমাজের কথা ডেস্ক : শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হয়েছেন আফরোজা। যত বাধা এসেছে, কোনো কিছু তাকে আটকাতে পারেনি তাকে। শিক্ষকতা ও সেলাইয়ের কাজ করেছেন। ছিল মুরগির খামার। সবশেষে ফ্রিল্যান্সিংয়ে দাঁড়িয়েছেন। সফল এই নারী ফ্রিল্যান্সারের নাম আফরোজা বেগম।
কাঁটায় বিছানো পথ আফরোজার। তবে তিনি সব সফলভাবে সামলিয়েছেন। স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাও দশ বছর ধরে চলছিল। এক পর্যায়ে স্কুল ছেড়ে দিতে হয় তাকে। চোখেমুখে অন্ধকার দেখলেন তিনি। পছন্দের মানুষকে বিয়ে করেছেন। বাবা নেই। ভাইদের কাছেও সাহায্য চাইতে তার মন সায় দেয়নি। আফরোজা বলেন, যখন শুরু করি তখন এ কাজটিকে কেউ ভালো চোখে দেখত না। অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে।
প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে তিনি প্রতিষ্ঠিত। তিনি দরিদ্র নারীদের সেলাই, রান্নার কাজ শিখিয়েছেন, যেন তারাও এসব কাজ করে খেতে পারে। এতিম, প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্রের পড়াশোনার খরচ বহন করেন তিনি।
২০১৪ সাল। ক্রিয়েটিভ আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স করেন। এই কোর্স তার চোখ খুলে দেয়। আফরোজা বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে রাত—দিন পরিশ্রম করতাম। আমি অনেক কিছু বুঝতাম না। পারতাম না। মনোবল ছিল, আমাকে পারতেই হবে। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হাত থেকে ল্যাপটপ পুরস্কার পান। তিনি তিন রঙের করপোরেট ইনভয়েস ডিজাইন করেন। নারী ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করবেন, কাজ শিখবেন— এমন একটা স্বপ্নের কথা বলেছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। তিনি জায়গার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন।
ফ্রিল্যান্সিঙে বয়স কোনো বাধা নয়। এক ফ্রিল্যান্সার বলছিলেন, তার বয়স চল্লিশ। এই বয়সে ফ্রিল্যান্সিং পারবেন কিনা। কিছুটা সন্দেহ ছিল। আফরোজা বলেন, তার বয়স আটচল্লিশ। এই বয়সেও প্রচুর কাজ করছেন তিনি। বয়স যেন হার মেনেছে তার কাছে। আফরোজা বলেন, বয়স আসলে কোনো বাধা নয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং, আর্টিক্যাল রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডাটা সায়েন্স অ্যান্ড এনালাইটিক্স, এফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি যে কোনোটি বেছে নেওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের পরিধি ব্যাপক। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি একটু কঠিন কাজ। তবে এসব কাজে আয় বেশি।
বিশ্বে নারী ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। বর্তমান বিশ্বে অনলাইন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ৫৮ ভাগ নারী। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে মাত্র ৯ শতাংশ নারী এ কাজ করতেন। ২০২১ তা দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে। আফরোজার মতে, ঘরে বসে মেয়েদের জন্য এর চাইতে ভালো কাজ হতেই পারে না। পরিবারকে সময় দেয়া, পছন্দের কাজ বেছে নেওয়া, ঘরে বসেই সব কিছু। তবে ধৈর্য থাকতে হবে। ভালো গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকা চাই।
আফরোজা কাজ শিখেছেন লার্নিং আরনিং ডেভেলপমেন্ট এবং ক্রিয়েটিভ আইটি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, আন্তরিকভাবে তাদের শেখানোর চেষ্টা করি। আমার কাছে লাভ—অলাভ পরে। ওদের শেখানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ইংরেজিতে একটু দক্ষতা থাকতে হবে। অন্তত ক্লায়েন্ট কোন কাজ করতে বলছেন, কেমন কাজ চান, সেই কাজে আপনার দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে বলার মতো ইংরেজিতে জ্ঞান থাকতে হবে। কাজ শিখতে সময় দিন। শুরুতেই সফলতা আসবে না। আমি নারী— এসব আমাকে দিয়ে হবে না। আমি কি পারবো? এ প্রশ্নগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। যারা অনেক দিন থেকে কাজ করছে তাদের প্রোফাইল দেখতে হবে। তাদের মতো করে নিজের প্রোফাইলকে সাজাতে হবে। প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারকেই মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হবে।