মাসুদ তাজ, অভয়নগর (যশোর) : ফের জলাবদ্ধতার শিকার ভবদহ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার। পানিবন্দি ২৫ গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করলেও মেলেনি এখনও কোনো সরকারি সহায়তা। কম দামে বিক্রি হচ্ছে গবাদিপশু। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ড়্গতে।
জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলাসহ খুলনা জেলার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৬৮ সালে অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের কালিশাকুল গ্রামের ভবদহ নামক স্থানে নির্মিত হয়েছিল ২১, ৯, ৬ ও ২ ভেন্টের ¯স্নুইস গেট। পরবর্তীতে টেকা, পশুর ও শ্রীহরি নদীর নব্যতা কমে যাওয়ায় ১৯৮৫ সাল থেকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা শুরম্ন হয় এ অঞ্চলে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকার উদ্যোগ নিলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। যে কারণে টানা বৃষ্টিপাত হলেই ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ড়্গতে।
সরেজমিনে তিন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বসতবাড়ির উঠানে কোমর পর্যšত্ম পানি জমে রয়েছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। গবাদিপশু ও মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করছে। উপজেলা কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভীটা, সরখোলা, ডুমুরতলা, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহটী, বাড়েধা, দীঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গী, বারান্দিসহ ২৫ গ্রামের হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, সম্প্রতি অতি বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আমার ইউনিয়নের বিল সংলগ্ন গ্রামগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। কয়েক’শ মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ১২৫ হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ড়্গতে তলিয়ে গেছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পড়্গ থেকে ত্রাণ সহায়তা বা ড়্গতির পরিমান নিরূপণ করতে দেখা যায়নি।
চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, এবারের জলাবদ্ধতায় অভয়নগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ড়্গতিগ্র¯ত্ম আমার ইউনিয়ন। তিনি আড়্গপে করে বলেন, মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা।
পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান আত¥গোপনে থাকায় সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। কি পরিমান ফসলি ড়্গতে ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রম্নত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
প্রবীর কুমার রায়, সোহাগ বিশ্বাস, আমিনুর রহমান বাঘা, আক্তারম্নজ্জামান, জালাল মোল্যাসহ ড়্গতিগ্র¯ত্ম ঘের মালিকরা বলেন, অতি বর্ষণ ও উজানের পানির কারণে তাদের হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে।
অভয়নগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে ৩ ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। যার ড়্গতির পরিমান প্রায় ৫ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ৫৯০ হেক্টরসহ ৩৫ হেক্টর জমির সবজি ড়্গতে তলিয়ে গেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। ড়্গতিগ্র¯ত্ম এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের ¯স্নুইস গেটে ৪টি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা বা¯ত্মবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।’