শাহ জামাল শিশির, ঝিকরগাছা : বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পদচারণায় ফুল উৎসবের সফল সমাপ্তি হয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছায় ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালী, পানিসারা ও হাড়িয়া মোড়ে সরকারিভাবে ২য় বার ফুল উৎসবের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শনিবার বিকেলে শেষদিনে শিশুদের ফুল অংকন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিনের চারদিনের ফুল উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সাপ্তাহিক ছুদির দিন হওয়ায় গদখালীর অদুরে পানিসারা—হাড়িয়া ফুল মোড়ে এলাকায় ছিল দর্শনার্থীর ভীড়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গদখালী, পানিসারা, হাড়িয়া এলাকা ছিল উৎসকমুখর। নানা শ্রেণিপেশার এবং নানা বয়সের মানুষের ভীড়ে পরিপূর্ণ ছিল গোটা এলাকা। বিভিন্ন ফুলের স্টলে শোভা পাচ্ছিল হরেক রকমের ফুল। ফুলপ্রেমিরা এলাকার বিভিন্ন ফুলের ক্ষেত ঘুরে ঘুরে দেখছে এবং নানাভাবে ছবি তুলছে। পানিসারা—হাড়িয়া মোড়ে ফুলের দর্শনার্থীদের আগমনের কারণে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলোতেও মানুষের ব্যাপক ভীড়। ফলে তারা বাণিজ্যিকভাবেও ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনোদন কেন্দ্র মালিকজানান, শুক্রবার একদিনে তার দুই লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
বৈচিত্রময় এই ফুলের রাজ্যকে দেশ বিদেশে তুলে ধরতে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো চারদিন ব্যাপি ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগের বার এই ফুল উৎসব ছিল তিন দিনের। গদখালী, পানিসারা, হাড়িয়া এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, হলুদ গাঁধা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। বাতাসে ফুটন্ত ফুলের সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে। ফুল উৎসবকে ঘিরে সারা বছর গদখালী এলাকা থেকে প্রায় ৪শ কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হবে বলে কৃষি বিভাগের দাবি।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, সারাদেশ এবং বিশ্বের কাছে এই ফুল সেক্টরকে তুলে ধরতে এই ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ফুল বিদেশে রপ্তানী করার উপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সারাবছরের মধ্যে এই শীতের মৌসুমকে ঘিরে ভড় ধরনের বাজার ধরার চেষ্টা করে কৃষকরা।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে এবং ফুলচাষিদের বেচাকেনাও ভাল হয়। যশোরের ঐতিহ্য এবং এই ফুলের রাজধানীকে সবার সামনে তুলে ধরা আমাদের মুল লক্ষ্য।
শনিবার সন্ধ্যার পরে শিশুদের ফুল অংকন প্রতিযোগিতার ৬জন বিজয়ী ও ষ্টল মালিকদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল।
শিশুদের ফুল অংকন প্রতিযোগিতার ৬জন বিজয়ীরা হলো, ক বিভাগের (শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) ১ম স্থান কৃষ্ণনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া তাজফিন, ২য় স্থান ও ৩য় স্থান যথাক্রমে পানিসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসকান খাতুন ও হুমায়রা খাতুন। খ বিভাগের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি) ১ম স্থান শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিয়া জামান, ২য় স্থান কৃষ্ণনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিসা আজহার, ৩য় স্থান বারবাকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইশা ইসলাম।