শাহ জামাল শিশির, ঝিকরগাছা : ফুলের সৌরভ আর সৌন্দর্য ছড়িয়ে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীতে শুরম্ন হয়েছে তিনদিনের ফুল উৎসব। ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রথমবারের মতো এই ফুল উৎসব যেন রঙের পাখা মেলে ধরেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন, ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ ফুল উৎসব ভূমিকা রাখবে। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম যশোরের গদখালী। এই গ্রামের নাম জানে না এমন কেউ নেই। এখানকার ফুলের সুবাস শুধু সমৃদ্ধি ছড়াচ্ছে না; সমৃদ্ধির সোপান হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। ফুলকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই উৎসব কাজে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে ফুল উৎপাদন-সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখা ৯ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, যশোর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. হুসাইন শওকত, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মনজুরম্নল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. মনোয়ার হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরম্নল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন ভক্ত, গদখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী মোড়ল, যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম, কৃষাণি সাজেদা বেগম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে এসে গদখালী প্রবেশদ্বারে একটি ফুল গেট নির্মাণ করার কথা জানিয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরম্নল ইসলাম। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে এই অঞ্চল আলোকিত রাখতে ৩৮টি স্ট্রিট লাইট দেয়া হয়েছে। এবার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এডিবি অথবা জাইকার বরাদ্দ থেকে একটি ফুলের রাজধানী গেট নির্মাণ করে দেয়া হবে। আগামী বছর মানুষ এই গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে অতিথিবৃন্দ ফুলের বিভিন্ন স্টল ও ক্ষেত ঘুরে দেখেন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
এদিকে ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতেছেন এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও সংশিস্নষ্টরা। ফুল ক্ষেতকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ফুলসেডকে একএকটি স্টলে রূপাšত্মরিত করা হয়েছে। গদখালীর পানিসারা হাড়িয়া ফুল মোড়ের ক্ষেতগুলো দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এ মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলোকেও ফুলক্ষেতের আদলে রূপ দেওয়া হয়েছে।
ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন জানান, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে সেজেছে গদখালী-পানিসারা এলাকা। প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ফুলচাষি সাজেদা বেগম বলেন, এই মেলা আমাদের ফুল চাষিদের মিলনমেলায় পরিণত করেছে। আমরা চাই প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করম্নক প্রশাসন। একইসাথে মেলাটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক জানান, ‘নানান রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’। এমন ¯েস্নাগানে যশোর জেলাকে ব্র্যান্ডিং করেছে সরকার। যশোরের ফুল, এই জেলার সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য। বৃহস্পতিবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনের ফুল উৎসব। প্রথম দিনেই ফুলচাষি, ব্যবসায়ী দর্শনার্থীদের মাঝে এই মেলা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মেলা শেষ হবে আগামী শনিবার। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের জন্য ২০টি নার্সারি, ৩টি পর্যটন প্যাভিলিয়ন ও ১০টি স্টল সাজানো হয়েছে। মেলা প্রাšেত্ম দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য যাত্রীবাহী ভ্যান ও অটো রিক্সাগুলোও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। শার্শা উপজেলা থেকে এক নবদম্পতি ঘুরতে এসে জানান, ফুলকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের অনেক উন্নতি হয়েছে। চারিদিকে ফুলের সুবাতাস। আরো কয়েকদিন পরে এখানে ঘুরতে আসার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ফুল উৎসবের কারণে তারা আগেভাগেই চলে এসেছেন।
সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ফুলের বিশাল এই বাণিজ্যও শুরম্ন হয়েছিল যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারাতে। ১৯৮২ সালের দিকে শের আলী সরদার রজনীগন্ধা ফুল চাষের মাধ্যমে এখানে ফুল চাষ শুরম্ন করেন। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গস্নাডিউলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমলিস্নকাসহ ১১ ধরনের ফুল। দেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ভাগের বেশি যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায়ও। প্রথম দিকে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাসে ফুল চাষ হলেও এখন প্রায় সারা বছরই ফুল চাষ হয়ে থাকে।