নিজস্ব প্রতিবেদক : ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালিতে ফুলের বাজারে রমরমা অবস্থা বিরাজ করছে। বসন্তবরণ ও বিশ^ ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে দু’দিনে রেকর্ড পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের হিসেবে গত দশদিনে এই বেচাবিক্রি ২৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ গোলাপ ফুলের হাতবদল হয়েছে। বিশেষ দিবসে গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় দামও উত্তাপ ছড়িয়েছে। চড়া দামে ফুল বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরাও। তবে পাইকার ও ফড়িয়ারা বাড়তি দামে ফুল কিনে অস্বস্তিতে রয়েছেন। খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দামে ফুল বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রযেছে তাদের।
সোমবার ও রোববার যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজারে যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। কাকডাকা ভোরে ক্ষেতের ফুল নিয়ে বাজারে হাজির হন কয়েকশ’ চাষী। বাইসাইকেলে-মোটরসাইকেলে কিংবা ভ্যানে তারা ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন। বগুড়া, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ও ফড়িয়াদের দর কষাকষিতে জমে ওঠে বাজার। দর কষাকষির পরও বিক্রিত ফুলের দামে খুশি ফুলচাষীরা। তবে হতাশার সুর ছিল পাইকারীদের কণ্ঠে। চড়া দামে কিনে খুচরা বাজারে ফুল বিক্রি কঠিন হয়ে যাবে সংশয় তাদের।
এ দু’দিনে মোকামে প্রতিটি গোলাপ (ক্যাপ ছাড়া) ২৫ টাকা ও ক্যাপসহ গোলাপ বিক্রি ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাঁচদিন আগেও গোলাপের পাইকারি দাম ছিলো প্রায় অর্ধেক। জারবেরা প্রতিটা ১০ থেকে ১৫, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বেচাবিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাদা ফুল প্রতি হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে গোলাপ ফুল।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গত পাঁচ, ছয়দিন ধরে দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা জমজমাট আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই প্রচুর ফুল সারাদেশে পাঠানো হচ্ছে। রোববার ও সোমবার দু’দিনে ২০ লাখ পিসের বেশি শুধু গোলাপই বিক্রি হয়েছে। আর এই গত দশদিনের হিসেবে তা ২৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ঝিকরগাছার গদখালি এলাকার ফুলচাষী ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া। ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি।
ঝিকরগাছার সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষী আব্দুর কাদের বলেন, ‘৩০ বছর ধরে নানান জাতের ফুল চাষ করেছি। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছি গোলাপ। সেই প্রথম থেকেই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপ কোন বার ১৫ টাকার বেশি পাইকারি দাম পাওয়া যায়নি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এই দামে সব কৃষকই লাভবান হবে।’
চাষী সালাম হোসেন বলেন, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উপলক্ষে সবচেয়ে গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা বেশি। তরুণীরা চুলের খোপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। এজন্যে জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের চাহিদাও রয়েছে।