ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: বাগেরহাটের ফকিরহাটে এবছর আমন মৌসুমে মাঠে কাঙ্খিত ধান উৎপাদন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক চাষি। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে আমন ধানে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন কৃষকরা। ফলন ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি আবাদ হলেও আমন ধানে কারেন্ট পোকা, অনাবৃষ্টি ও অন্যান্য সমস্যার কারণে উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা করছেন চাষিরা।
কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে বেড়েযায় উৎপাদন খরচ, আর এখন কাঙ্খিত ফসল না ফলায় বাড়ছে কৃষকদের দুশ্চিন্তা। বিশেষ করে নিচু জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ, ফসল পচে যাওয়া ও তুলনামূলক উঁচু জমিতে পানির অভাবে অনেক জমির ধানে শীষ বের হতে পারেনি, যা বের হয়েছে তাও পরিপুষ্ট নয় (চিটা) বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবি, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
গতকাল বুধবার উপজেলার কয়েকটি বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জমির ধান গাছের গোড়া পচে মাটির সাথে মিশে গেছে। আবার অনেক স্থানে ধান না হওয়ায় কৃষক তা কেটে গরু ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন। কোনো কোনো জমিতে ধান হলেও তা যথেষ্ট পরিপূষ্ট নয়। বেশিরভাগ ক্ষেতে ধানের গোছা তুলনামূলক ছোট। তবে অনেক জমিতে ধানের ভালো ফলনও লক্ষ্য করা গেছে।
কৃষকদের দাবি, এ পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা তাদের পরামর্শ বা সহযোগিতা করেননি। ফলে ধানের বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমনের জন্য তারা দোকানদার এবং বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়েছেন। তাদের দেওয়া পরামর্শে ওষুধ সার ব্যবহার করে শুধু খরচ বেড়েছে; মাঠের ধান রক্ষা করা যায়নি।
উপজেলার বাহিরদিয়া এলাকার আহম্মদ শেখ, মোস্তফা হাসানসহ একাধিক কৃষক জানান, সোলাউরো ও বালিয়ার বিলে তাদের চাষকৃত ধানের প্রায় অর্ধেক জমিতে কাঙ্খিত ফসল ফলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে ধানের গোড়া থেকে কেটে ফেলেছেন। আবার কারেন্ট পোকার আক্রমণে পচে যাওয়া ধানের খড়ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
চাষি আহম্মদ শেখ আরও জানান, গতবছর তার ২৫ শতক জমিতে ২৮মণ আমন ধান হয়েছিল। এবছর একই জমিতে মাত্র ৩০কেজি ধান পেয়েছেন।
উপজেলার বগুড়ার বিলেও অনেক স্থানের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। চাষি সরদার গোলাম মোস্তফা জানান, গত বছর তার ১৪ কাঠা জমিতে ৩২ হাজার টাকার ধান ও ৬ হাজার ২০০ টাকার খড় বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এবছর ১০ কেজি ধানও হবে না। একই বিলের এক বিধবা কৃষাণী হাবিবা খাতুন জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই জমি চাষ করেন। কিন্তু এবছর কারেন্ট পোকার কারণে তার অর্ধেক ধান পচে গেছে। বাকী ধানের শীষ চিটা (অপুষ্ট) হয়েছে।
নলধা মৌভোগ ইউনিয়নের বড় বিলের চাষি বরকতুল্লাহ শাপলা জানান, তার তিন বিঘা জমির সব ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তিনি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এবার প্রাকৃতিক পরিস্থিতি কিছুটা বিরূপ হওয়ায় আমনে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরামর্শ প্রদান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এবং তারা সেটা করেছেন।