১৬ই জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প
প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প

মিলন রহমান : ‘একটু তরকারি দেবে না বলে যে প্রতিবেশি কড়াই ঢেকে রেখেছিল; তার মেয়ের বিয়েতে ৪০ হাজার টাকা ধার দিয়েছি!’ দিন বদলের গল্প শোনাতে শোনাতে অশ্রম্নসিক্ত কণ্ঠে কথাটি বলেন যশোর শহরের পুরাতন কসবা লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা হামিদা আক্তার বিউটি।

বাল্যবিয়ের শিকার হনুফা খাতুন চা দোকানি স্বামীর সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় হাতের কাজের দেড়শ’ টাকা মজুরি দিয়ে নিজের সূচিশিল্পের কাজ শুরম্ন করেন। কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা হনুফা খাতুন এখন মাসে গড়ে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন। ছেলেকে পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে; মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যাওয়া রূপালী খাতুন দর্জি প্রশিক্ষন নিয়ে সেলাই এবং কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এখন ব্যাগ বানিয়ে মাসে তার প্রায় ১৫ হাজার টাকা উপার্জন। উপশহরের বাসিন্দা রূপালীর সংসারেও এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য।

আর রাজিয়া খাতুন তো সংগ্রাম নারী হিসেবে অন্যদের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। শূন্য থেকে শুরম্ন করে হস্তশিল্প, শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা, মুদি দোকান, হাঁস মুরগি গরম্নর খামার করে নিজের জীবন যেমন বদলে নিয়েছেন; তেমনি অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করছেন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। পেয়েছেন এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে দেশসেরার স্বীকৃতিও।

আত্মপ্রত্যয়ী এই নারীদের দিন বদলের গল্পের নেপথ্যের সারথী ‘ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইইডি’। কোনো ঋণ কার্যক্রম নয়; প্রয়োজনীয় প্রশিড়্গণ এবং আত¥কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সংস্থাটি। শুধু বিউটি, হনুফা, রূপালী বা রাজিয়া নয়; এমন অসংখ্য নারী স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বদলে গেছে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক চিত্র; পরিবার ও সমাজের নানা উন্নয়ন কর্মকা-েও তারা ভূমিকা রাখছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও আইইডি’র এই কার্যক্রমের ইতিবাচক মূল্যায়ন করছেন।

বিউটি’র দিনবদলের গল্প : যশোর শহরের পুরাতন কসবা লিচুবাগান এলাকার হামিদা আক্তার বিউটি বাবা মায়ের ৮ সšত্মানের মধ্যে ৬ষ্ঠ। মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যšত্ম লেখাপড়া করে ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন মহুরি মনিরম্নজ্জামান হীরনকে। বিউটির বিয়ের মাত্র ৫ মাস পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন তিনি গর্ভবতী। এক বছর পর স্বামী ফিরে এলেও মাদকাসক্ত-বেকার। উপায়šত্মর না পেয়ে বিউটি সংসারের হাল ধরার জন্য বাসাবাড়িতে কাজ করেন; পরে অনেক চেষ্টায় ৩৮০০ টাকা বেতনে শহরের একটি ক্লিনিকে চাকরি নেন। সেখানে ৮ বছর চাকরি করেন। সংসারের সমস্ত ব্যয়ভার তার উপরই ছিল। স্বামীর মন চাইলে কিছু টাকা দিত। চাকরি করে সংসার চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হত। এটা দেখে তার বড় বোন তাকে কাপড়ের ব্যবসা করার পরামর্শ দেন এবং সেই সাথে ১০ হাজার টাকা ধার দিয়ে কুষ্টিয়ার পোড়াদহে নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিচ, বিছানার চাদর নিয়ে এসে বাড়িতেই বিক্রি শুরম্ন করেন। এ সময় তিনি আইইডি’র সচেতনতা দলের সদস্য হন। এর মাধ্যমে দড়্গতা উন্নয়ন প্রশিড়্গণের পর তিনি ব্যবসাটিকে আরও ভালভাবে বুঝতে শুরম্ন করেন। এরপর প্রতি সপ্তাহে পোড়াদহের শাড়ি, থ্রিপিচের পাশাপাশি যশোরের বড়বাজার থেকেও পাইকারি দামে গজ কাপড়, থ্রীপিচ, লুঙ্গি নিয়ে এলাকায় বিক্রয় শুরম্ন করেন। পাশাপাশি হাতের কাজের শাড়ি, থ্রিপিচ, বেডশিটও যুক্ত হয় তার ব্যবসার সাথে। পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও পূঁজি সঙ্কটে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারছিলেন না বিউটি। এ সময় আইইডি’র সহযোগিতায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন প্রতি সপ্তাহে পোড়াদহ থেকে অšত্মত ৫০ হাজার টাকার শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিচ, বিছানার চাদর নিয়ে আসেন। সাথে থাকে যশোরের হাতের কাজের শাড়ি, থ্রিপিচ, বেডশিটসহ বিভিন্ন কাপড়সামগ্রী।

হামিদা আক্তার বিউটি জানালেন, প্রতিমাসে দু’লড়্গাধিক টাকার বেচাকেনায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় হয় তার। এখন তার পূঁজি প্রায় দশ লাখ টাকার। ঘটা করে সম্প্রতি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়েপরে সঞ্চয়ও করছেন।

অতীত কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অশ্রম্নসিক্ত বিউট বললেন, ‘বাড়িতে কোনো তরকারি নেই, প্রতিবেশির কাছে তরকারি চাইতে গেছি। তরকারি দিবে না বলে, কড়াই ঢেকে রেখেছে। পরিশ্রম করে আমি আমার দিন বদলেছি। সেই প্রতিবেশি মেয়ের বিয়েতে টাকা ধার চেয়েছে; তাকে ৪০ হাজার টাকা ধার দিয়েছি। আমার অতীত কষ্টের কথা মনে করে কষ্টে থাকা মেয়েরা আমার কাছে আসলে তাদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করি।’

স্বপ্নবান নারী হনুফা : বুকের মাঝে লালিত স্বপ্নকে পূরণ করতে সমাজের প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন হনুফা খাতুন। যশোর জেলা সদরের কাজীপাড়ার ভাড়া বাসায় হনুফা খাতুনের বসবাস। স্থানীয় মানুষের অতি পরিচিত হনুফা আপা পেশাগত জীবনে একজন কাপড় ব্যবসায়ী। আইইডি যশোর কেন্দ্রের নারী দলের সভানেত্রী হনুফার আইইডি যশোরের সাথে পথ চলার শুরম্ন ২০০৫ সালে নারী উদ্যোক্তা প্রশিড়্গণের মাধ্যমে।
স্বামী সাধারন চা দোকানদার। ফলে সংসার জীবনে অভাব অনটন ও কখনও বা কঠোর দরিদ্রতা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। সংসারে এক ছেলে, এক মেয়ে, স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে মোট ছয় সদস্যের পরিবার। তাই দরিদ্র্যের সাথে লড়াই করার সিদ্ধাšত্ম নেন।

স্বপ্নবান নারী হনুফা

                                                                                                                          স্বপ্নবান নারী হনুফা

কশুরুটাও হয়েছিল সেলাই কাজে নিজের আয় করা শাড়ি সেলাই থেকে পাওয়া মাত্র দেড়শ’ টাকা দিয়ে। সেই টাকা দিয়ে অন্যের মাধ্যমে কাপড় ও সুই-সুতো কিনে সেলাইয়ের কাজ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে হাতের কাজের শাড়ি, থ্রি-পিচ, বেডসিট বিক্রি শুরম্ন করেন। বাড়িতে বসেই এখন তিনি প্রতিমাসে অর্ধলড়্গাধিক টাকার শাড়ি, থ্রি-পিচ, বেডসিট। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ হাজার টাকা তার উপার্জন হয়। স্বামীর উপার্জনের বাইরে এই টাকায় তিনি সংসারে ব্যয় করছেন; সšত্মানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। ছেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মেয়ে এবছর মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হনুফা খাতুন জানালেন, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নারী দলের সকল সদস্যকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। দলের কোন সদস্যের কোন ধরনের সমস্যা হলে দলের অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তাৎড়্গনিকভাবে দলের অন্য সদস্যদের সাথে নিয়ে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি। আবার প্রয়োজন অনুযায়ি আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে আইনি সহায়তা পেতে সহযোগিতা করি। এছাড়া এলাকার কোন ব্যক্তি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্য হলে তাদের কে নিয়ে সমাজসেবা, মহিলা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে ভাতা পেতে সহযোগিতা করি।

সংগ্রামী নারী রুপালী : রুপালী খাতুনে জন্ম যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি এলাকায়। ৫ম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় ১৩ বছর বয়সে ২০০৭ সালে বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয় উপশহরের বিরামপুর এলাকার টুটুল হোসেন মন্ডলের সাথে। তার স্বামী পেশায় একজন পস্নাম্বার। বিয়ের পর তার লেখাপড়া থমকে যায়। বিয়ের দুই বছর পর কন্যা সšত্মান জন্মগ্রহণ করে। ১৩ বছর আগে উপশহর এলাকায় আইইডি পরিচালিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে জানতে পেরে আইইডি’র নারী দলের সাথে যুক্ত হন। দলীয় সভার মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন। আয়ের সাথে যুক্ত হওয়ার চিšত্মা থেকেই শেখেন দর্জির কাজ। তারপর স্বামীর সহযোগিতায় একটি পুরাতন সেলাই মেশিন কিনে এলাকায় মজুরির ভিত্তিতে দর্জির কাজ শুরম্ন করেন। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে আয়ের টাকা সংসারে খরচের পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে থাকেন।

সংগ্রামী নারী রুপালী

সংগ্রামী নারী রুপালী

পরবর্তীতে রুপালী আইইডির নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিড়্গণ, দড়্গতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিড়্গণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিড়্গণসহ অন্যান্য প্রশিড়্গণে অংশগ্রহণ করেন। এরপর সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে গজ কাপড়, শাড়ি ও থ্রিপিচের ব্যবসা শুরম্ন করেন। দর্জির কাজের পাশাপাশি তার ব্যবসাও ভালো চলছিল। করোনা পরবর্তী সময়ে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে দমে যাওয়ার পাত্র নন রম্নপালী। কয়েক মাস আগে তিনি চটের ব্যাগ তৈরির প্রশিড়্গণ নিয়েছেন। এখন পুরোদমে ব্যাগ তৈরিতে ব্য¯ত্ম সময় যাচ্ছে তার। স্বামী বাজার থেকে চট ও সিমেন্টের ব¯ত্মা কিনে এনে কেটে দেন। রম্নপালী বেগম ও একজন সহযোগী সেই ব্যাগ সেলাই করেন। এই ব্যাগ থেকেই প্রতিমাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে তার।
রম্নপালি বেগম জানালেন, বর্তমানে পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। ভবিষ্যতে কাপড় ও ব্যাগের ব্যবসা আরও বড় করে অন্যদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান। ভবিষ্যতে মানুষের পাশে থেকে সমাজের জন্য আরো ভালো কিছু করার স্বপ্ন তার।

অন্যের জন্য উদাহরণ রাজিয়া : রাজিয়া খাতুন আট ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। অভাবের সংসারে ১৩ বছর বয়সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারেও নুন আনতে পানতা ফুরায়-এমন অবস্থা। ১৯৮২ সালে প্রথম সšত্মানের মা। প্রথম সšত্মানের জন্মের পর সিদ্ধাšত্ম নিয়ে নৈশবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। ইচ্ছা থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি আর পেরোতে পারেননি। তখন নিজেকে সংসারের আয়বর্ধক নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে ফেলে এবং বাড়িতে ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো শুরম্ন করেন। পরবর্তীতে আইইডি থেকে সেলাই প্রশিড়্গণ করে দুই দশক আগে টিউশনির জমানো দুই হাজার তিনশত পঞ্চাশ টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। সেলাই কাজের পাশাপাশি নকশিকাঁথা সেলাই কাজ শুরম্ন করেন। এ কাজে অল্পদিনে মধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া পড়ে যায়। হ¯ত্মশিল্পের কাজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এলাকার অন্য নারীদের দিয়েও কাজ করিয়ে বিক্রি শুরম্ন করেন। শাড়ি, থ্রি পিস, বেড সিট, টু-পিস পাইকারি কিনে এনে এলাকার নারীদের দিয়ে নকশি ও ফুল তুলে বিক্রি করতে থাকেন। পাশাপাশি হাঁস, মুরগি ও গরম্নর খামার গড়ে তুলেছেন। মুদি দোকান দিয়েছেন। শহরের লিচুবাগান এলাকায় তিন শতক জমি কিনে বাড়ি করেছেন। ছেলেকেও আলাদা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে হ¯ত্মশিল্প ব্যবসায়ী ও খামারি হিসাবে সফল তিনি। তিন দশকের লড়াইয়ে রাজিয়া খাতুন এখন অন্যের জন্য উদাহরণ।

রাজিয়া খাতুন বলেন, নিজে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছি। জীবনের খুব কাছ থেকে দেখেছি কষ্ট কাকে বলে। কষ্ট দূর করার জন্য লড়াই করেছি। স্বপ্ন দেখেছি, দৃঢ় মনোবল ছিল। পেছনে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কারও কথায় কান দেইনি। স্বপ্ন পূরণে কাজ করে গেছি। আমাকে যারা বদনাম করত তারাই এখন আমার প্রশংসা করে, সম্মান দেয়। সামাজিক উন্নয়নে এখনো কাজ করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে কাজ করব।
কঠোর পরিশ্রম করে দরিদ্র্যকে জয় করা রাজিয়া কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ স্থানীয় সরকার পলস্নী উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় নগর উন্নয়ন সেক্টর ক্যাটাগরিতে দেশসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। দরিদ্র শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে ঢাকা ও ভারতের মুম্বাই শহর সফর করে বিভিন্ন কর্মকা- পরিদর্শন করেছেন।

শুধু বিউটি, হনুফা, রূপালী বা রাজিয়া নয়; এমন অসংখ্য নারী স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বদলে গেছে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক চিত্র; পরিবার ও সমাজের নানা উন্নয়ন কর্মকা-েও তারা ভূমিকা রাখছেন। আত¥প্রত্যয়ী এই নারীদের দিন বদলের গল্পের নেপথ্যের সারথী ‘ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইইডি’।

আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার জানান, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আইইডি একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২০০৪ সাল থেকে যশোরে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যশোরে আইইডি’র ৫০টি নারী দলে ১ হাজার ১১ জন তৃণমূল পর্যায়ের নারী, ১০টি পুরম্নষ দলে দুশ’ জন তৃণমূল পর্যায়ের পুরম্নষ সদস্য, ৬টি কিশোরী দলে ১২০ জন তৃণমূল নারীদের পরিবারের কিশোরী, ১৬টি উদ্যোক্তা দলে ৩২০ জন তৃণমূল পর্যায়ের নারী, একটি যুব ও সাংস্কৃতিক ফোরামে ২০ জন শিড়্গার্থী ও পেশাজীবী, সমাজের বিত্তবান ২০ জন নারীকে নিয়ে নারী ফোরাম এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে নাগরিক পস্নাটফর্ম ‘জনউদ্যোগ’ রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, আইইডি কোনো ঋণ কার্যক্রম নয়; বরং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দড়্গতা উন্নয়ন প্রশিড়্গণ এবং আত¥কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সংস্থাটি। প্রশিড়্গণের মধ্যে রয়েছে, দর্জি, পাটেরব্যাগ তৈরী, নেতৃত্ব ও বিকাশ, কিশোরীদের জেন্ডার প্রশিড়্গণ, আত¥রড়্গা ও আত¥বিশ্বাস তৈরীতে প্রশিড়্গণ (কারাতে ১৬ দিনব্যাপী) ও ১০ মাস মেয়াদী দড়্গতা উন্নয়ন প্রশিড়্গণ।

নারী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাড. সৈয়দা মাসুম বেগম বলেন, সমাজের প্রাšিত্মক অবস্থানে থাকা নারীদের উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তুলে স্বাবলম্বী করতে ভূমিকা রাখছে আইইডি। নানাভাবে প্রশিড়্গণ নিয়ে এই নারী আত¥কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আয় উপার্জন করে। এতে পরিবারে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য আসছে, তেমনি পরিবারে-সমাজের উন্নয়ন কর্মকা-েও তারা ভূমিকা রাখতে পারছে। এই নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে আরও বি¯ত্মৃত করতে ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন।

জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র যে নারীরা একরকম গৃহবন্দি ছিল। আইইডি তাদের প্রশিড়্গতি ও কর্মমুখী করেছে। আর্থিক ভিত্তি পাওয়ায় এই নারীরা এখন তাদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন। তারা পরিবার সমাজে মতামত প্রদান ও সিদ্ধাšত্ম গ্রহণে ভূমিকা রাখছে। বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একতাবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুলছে। সমাজ, রাষ্ট্র তাদের অবদানের স্বীকৃতিও দিচ্ছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, আইইডিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা পিছিয়ে পড়া নারীদের নানাভাবে প্রশিড়্গতি করে আত¥কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্ত হয়ে এই নারীরা আয়-উপার্জন করায় তাদের সংসারে যেমন স্বচ্ছলতা এসেছে, তেমনি তারা নিজেরাও বিভিন্ন সিদ্ধাšত্ম গ্রহণের সড়্গমতা অর্জন করেছে।

যশোর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা নারীদের উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তুলছে। সমাজের প্রাšত্মসীমার এই নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবার ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। সরকারও নানা ধরণের প্রণোদনায় তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে এবং আরও অগ্রসর হতে সহযোগিতা করছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram