নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ হুমকির প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ রূপ নিয়েছিল জনসভায়। হাজার হাজার নেতাকর্মীর ‘জয়বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে টাউন হল ময়দান পরিণত হয়েছিল প্রতিবাদের এক উত্তাল মঞ্চে। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কঠোর হুশিয়াঁরি উচ্চারণ করে বলেছেন, যশোরে বিএনপি যদি আগুন নিয়ে খেলতে আসে তাহলে পরিণাম ভাল হবে না। জামাত-বিএনপির নৈরাজ্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই জেলার আট উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা; জয় বঙ্গবন্ধ’ু স্লোগান দিয়ে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে টাউনহল ময়দানে সমাবেশস্থলে হাজির হন। সমাবেশস্থলে জয়গা না পেয়ে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইকে বক্তব্যে শোনেন নেতা-কর্মীরা।
শুক্রবার টাউনহল ময়দানে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইন্ধনে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা হুমকি দিয়েছে রাজশাহীর বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। এই হুমকি ষড়যন্ত্রের খেশারত তাকে দিতে হবে। আর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া তারেক রহমান লন্ডনে মারা গেলেও তার লাশ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। কারণে লন্ডনে বসে বাংলাদেশকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারেক। ’
সমাবেশে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি বলেন, বিএনপি যশোরের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ঠাণ্ডা করে দেবে। বিএনপি হুমকি দিয়েছে, শনিবার যশোর নাকি অচল করে দেবে। বিএনপি যদি যশোরে কোনো সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে আসে তাহলে তাদের ঘরে থাকতে দেয়া হবে না। বিএনপির তারেক লন্ডন বসে দেখেন; এক রাতের মেসেজে শহরে জনস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার খেলা হবে বিএনপির সাথে। কিভাবে তারা সমাবেশ করে দেখা যাবে। শুনলাম বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুখ ইসলাম আলমগীর ভয়ে পালিয়েছে। তিনি আর যশোরে আসবে না বলেছে।’
সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন আরো বলেন, জাতির জনক যে আদর্শ দেখিয়ে গেছেন তা আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে অনুসরণ করার পাশাপাশি কর্মে মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সৎ, রাজনৈতিক জীবনের সাহসী, পারিবারিক জীবনের স্বচ্ছ, জাতীয় জীবনে অত্যন্ত দূরদর্শী এবং আন্তর্জাতিকতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন ন্যায়ের প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান ।
সমাবেশে শাহীন চাকলাদার এমপি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে সম্মান করে। জামায়াত-বিএনপির কাছে ধ্বংস হওয়া গণতন্ত্রে আওয়ামী লীগ প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছে। গণতন্ত্রকে পাকাপোক্ত করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই করেছে। বিএনপির জন্ম গণতন্ত্রের মাধ্যমে হয়নি। তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। আমরা যখন রাজপথে নামবো তখন কিন্তু আপনারা রাজপথে জায়গা পাবেন না। কর্মসূচির নামে এই শান্তিপ্রিয় যশোরে আগুন সন্ত্রাস নিয়ে যদি খেলা করেন; তার পরিণাম ভালো হবে না। যশোরের তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আগুন সন্ত্রাস রুখে দেয়া হবে। মনে রাখবেন আওয়ামী লীগ ধরলে ছাড়ে না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র কখনও কাজে আসেনি।
সমাবেশে যশোর পৌর মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, বিএনপি বাংলাভাই ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিলো। খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় ও মদদেই এদের উত্থান ও কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিলো। বিএনপির আমলে দেশব্যাপী বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে তারা বিদেশে চাকরি দিয়েছিল। বর্তমান সরকার জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। খালেদা জিয়ার বিএনপি আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে; তাদেরকে দমন করতে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে।
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাছির উদ্দিন বলেন, জামাত-বিএনপি সবসময় ষড়যন্ত্র করে। আর এই ষড়যন্ত্র নির্বাচন আসলে বেশি শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সবসময় এ ষড়যন্ত্র নৎসাত করেছে। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সকলকে এক থাকতে হবে এবং শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। এক থেকে সামনের নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।
যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুর পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্যে রাখেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুন্সী মহিউদ্দিন, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ আতিকুর বাবু, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজু, কৃষকলীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারররফ হোসেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লাইজু জামান, সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎস্না আরা মিলি, জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর রহমান, যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েল, রওশন ইকবাল শাহী, জেলা যুবমহিলা লীগের সভাপতি মুঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব প্রমুখ।