সাইফুল ইসলাম: যশোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি জমিতে ভূট্টা ও গমের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের এ পরিসংখ্যানের চেয়েও ভূট্টা গমের প্রকৃত আবাদ আরো বেশি হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের। আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা ও গম আবাদে ঝুঁকেছে। বিগত বছরে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর অঞ্চলের ভূট্টা চাষিরা আশাতীত দাম পাওয়ায় এবার যশোরের চাষিরাও আগ্রহী হয়েছে। এমনকি যে চাষি জীবনে কোন দিন গম ভুট্টা চাষ করেননি তিনিও এ চাষে ঝুঁকেছেন।
আবহাওয়া অনুক‚ল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভ‚ট্টা ও গম চাষ হওয়ায় গতবারের চেয়ে বেশি ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় গম-ভ’ট্টা চাষে চাষিদের আগ্রহও বাড়ছে প্রতি বছর। চলতি বছর এই দুই শস্যের চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৬১ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, যশোরে এ বছর বেড়েছে ভ‚ট্টা ও গম চাষ। ২০২০- ২১ মৌসুমে ১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে ভ‚ট্টা চাষ হয়েছিল ও গম চাষ হয়েছিল ৩৯৯ হেক্টর জমিতে। এ সময় ১ হাজার ২৭৭ মেট্রিক টন গম উৎপাদিত হয় এবং ১২ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদন হয়। একই বছর চাষের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯৭ হেক্টর জমিতে ভূট্টা এবং ৩৯৯ হেক্টর জমিতে গম চাষের।
চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ভূট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমি এবং গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪০ হেক্টর। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে চাষ করার কথা থাকলেও চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৬১ হেক্টর। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমিতে ভ‚ট্টা ও ৬২৪ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। চাষ বেশি হওয়ায় জেলায় উৎপাদনও বাড়বে বলে মনে করে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেশি পাবেন চাষিরা এমনটিই তাদের বিশ্বাস। কৃষি বিভাগের মতে, জেলায় ভূট্টার উৎপাদন ভালো, হেক্টর প্রতি জাত ভেদে ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন ফলন হয় এবং গম হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ মেট্রিক টনের বেশি হয়।
সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে যশোর সদর উপজেলায় ভ‚ট্টা চাষ হয়েছে ৪৯ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ১৩৭ হেক্টর জমিতে। শার্শা উপজেলায় ভ‚ট্টা চাষ হয়েছে ২৪০ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। চৌগাছা উপজেলায় ভ‚ট্টা ৪৩০ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। ঝিকরগাছা উপজেলায় ভ‚ট্টা চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। মনিরামপুর উপজেলায় ভ‚ট্টা চাষ হয়েছে ১৮৫ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ১২৫ হেক্টর জমিতে। বাঘারপাড়া উপজেলায় ভ‚ট্টা চাষ হয়েছে ৩৮ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে। অভয়নগর উপজেলায় ভ‚ট্টা ৫০ হেক্টর ও গম ২৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে । কেশবপুর উপজেলায় ভ‚ট্টা চাষ হয়েছে ৯৫ হেক্টর ও গম চাষ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে এসব এলাকার মাঠে দেখা গেছে বেশিরভাগ ভ‚ট্টা গাছে ফুল এসেছে। আবার অনেক ভ‚ট্টা গাছে মোচা আসতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ গম গাছে ফল এসে গেছে।
চৌগাছা উপজেলার শাহাজদপুর গ্রামের গম চাষি আল মামুন বলেন, তিনি এ বছর প্রায় এক বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। এ বছর আটার চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন।
চৌগাছা উপজের মৎস্যরাঙ্গা গ্রামের কৃষক আশারোফ হোসেন বলেন, তিনি এবছর প্রথম দেড় বিঘা জমিতে ভ‚ট্টা চাষ করেছেন। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধির পাওয়ায় এ ভ‚ট্টার ভূষি গরুর খাবারহিসেবেও বিক্রি করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন এবছর প্রতি মণ ভ‚ট্টা ১ হাজার ৪০০ টাকা করে দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, ভ‚ট্টা চাষে খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় এ বছর জেলায় ভ‚ট্টা চাষ বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশে ভ‚ট্টা চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া গো খাদ্য হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলায় গম চাষ সম্পর্কে বলেন, এবছর জেলায় গমের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানি হ”েছ না তাই বাজারে আটার দাম বেশি। এসব কারণে চাষিরাও আগ্রহী এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও দেশে গম চাষ বাড়ানোর কাজ করছে।