৯ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রণোদনার আওতায় যশোরের ৬৭ হাজার কৃষক
প্রণোদনার আওতায় যশোরের ৬৭ হাজার কৃষক

তহীদ মনি : : চলতি বছর যশোরের ৬৭ হাজার কৃষক সরকারি প্রণোদনার আওতায় আসছে। এ সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ১৭ হাজার বেশি। গত বছর প্রণোদনার আওতায় ছিল ৫০ হাজার ৩২০ জন কৃষক। প্রণোদনা হিসেবে কৃষকরা পাচ্ছেন বীজ ও সার। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রণোদনা কৃষি পণ্যের উৎপাদন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, খরিপ মৌসুমে জেলার ২৩ হাজার কৃষক প্রণোদনা পেয়ে ২৩ হাজার বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছেন। আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া রবি মৌসুমে প্রণোদনার জন্যে ৪৪ হাজার ২৭০ কৃষক তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তালিকাভুক্ত কৃষকরা গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখি, চিনাবাদাম, শীতকালীন পেঁয়াজ, মসুর এবং মুগ বীজ পাবেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, প্রণোদনার জন্যে কৃষক বাছাইয়ের কাজ করে উপজেলা কমিটি। সে কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা চেয়ারম্যান। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য সচিবের কাজ করেন উপজেলা কৃষি অফিসার। এছাড়া সদস্য রয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, বিআরডিবি কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার, সমবায় অফিসার, সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি। কমিটি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদেকে নির্বাচন করে।

নির্বাচিত কৃষকরা এক বিঘা জমির জন্যে বীজ ও উপকরণ পেয়ে থাকেন। কমিটি কৃষক নির্বাচনকালে পাশাপাশি জমি আছে এমন কৃষকদেরকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নির্বাচিত কৃষকদের নাম উপজেলা কমিটির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিস ও দপ্তরে পাঠানো হয়। পরে জেলা ও বিভাগীয় কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচিত কৃষককে নির্ধারিত ফসলের জন্যে বীজ, সারসহ উপকরণ দেওয়া হয়। বীজ সাধারণত বিএডিসির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। পরে সার ও বীজ উপজেলায় কৃষকদেরকে একত্রিত করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করা হয়।

কৃষি বিভাগের দাবি, যশোরের মাঠে এখনো আউশ ধান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এ বছর দেরিতে বৃষ্টি হওয়া, অতিরিক্ত গরম ও খরার কারণে কৃষক পর্যায়ে চাষে উৎসাহ কম ছিল। গরম, খরা ও পানি অভাবে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও কাছাকাছি পৌঁছেছে। চলতি বছর জেলায় আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর । সেখানে চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ১হাজার হেক্টরের স্থলে চাষ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর এবং উফশী ১৬ হাজার ৯৫০ হেক্টরের স্থলে আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৫২০ হেক্টর ।

তবে আবাদ হওয়া ১৪ হাজার ৯৭০ হেক্টরের মধ্যে প্রণোদনা প্রাপ্ত ২৩ হাজার বিঘা জমি ও ২৩ হাজার কৃষক রয়েছেন। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে খরিপ মৌসুমে ১৩ হাজার ৫শ কৃষক প্রণোদনা পেয়ে আউশ আবাদ করেছিলেন। প্রণোদনা হিসেবে তারা প্রত্যেকে ৫ কেজি ধান বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পেয়েছিলেন।

চলতি বছর আউশের জন্যে হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন হিসেবে জেলায় মোট ফলনের টার্গেট করা হয়েছিল ৫১ হাজার ৬৯৬ মেট্রিক টন চাল। সেখানে হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন হিসেবে ৪২ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৮২ হেক্টর জমির ফসল কেটে ২৫ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্যে যশোরে সরকার কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আগত রবি মৌসুমে ৪৪ হাজার ২৭০ জন কৃষক প্রণোদনার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৮২০। বাছাইকৃত কৃষকদের মধ্যে ২ হাজার জন গম, ১ হাজার ২৫০ জন ভূট্টা, ৩৭ হাজার ৮শ জন সরিষা, ১৬০ জন সূর্যমুখি, ১২০ জন চিনা বাদাম, ৫২০ জন শীতকালীন পেঁয়াজ, ২ হাজার ১শ জন মসুর এবং ৩২০ জন চাষি মুগ চাষ করবেন।

প্রণোদনার তালিকাভুক্ত চাষিরা ২০ কেজি গম বীজ, ১০ করে ডিএপি ও ১০ এমওপি সার, ভূট্টা চাষের জন্যে ২ কেজি বীজ, ১০ করে ডিএপি ও ৫ এমওপি সার, সরিষা চাষের জন্যে এক কেজি বীজ, ১০ করে ডিএপি ও ৫ এমওপি সার, পেঁয়াজ চাষের জন্যে এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ এমওপি সার, মসুর চাষের জন্যে এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার, মুগ চাষের জন্যে ৫ কেজি বীজ, ৫ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার, চিনাবাদাম চাষের জন্যে ১০ কেজি বীজ, ৫ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার এবং সূর্যমুখি চাষের জন্যে ১ কেজি বীজ, ১০ করে ডিএপি ও ১০ এমওপি সার পাবেন।

বিভিন্ন ফসলের অনুদান প্রাপ্ত যশোর সদরের লেবুতলা গ্রামের মনিরুজ্জামান, ফতেপুরের তরিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম, মণিরামপুরের মফিজুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, সরকার প্রণোদনা দেওয়ায় সার, বীজের খরচ লাগছে না। এটা আমাদের জন্যে দারুণ খবর। আমরা উৎসাহিত হই। তবে মেশিনের মাধ্যমে পানি দিতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ে। তাছাড়া বাজার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কৃষি শ্রমিককে বেশি দাম দিতে হয়। এতে কৃষকের সার্বিক খরচ বেড়ে যায়। তারপরও সরকারের এই উদ্যোগের কারণে অনেকেই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, উপকার পাচ্ছেন।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চলতি বছরে ১হাজার ৫শ হেক্টরে গম, ১ হাজার ২৫০ হেক্টরে ভূট্টা, ২৫ হাজার হেক্টরে সরিষা, ৫০ হেক্টরে সূর্যমুখি, ১৫০ হেক্টরে চিনা বাদাম, ৪ হাজার হেক্টরে মসুর ও এক হাজার ৫শ হেক্টরে পেঁয়াজ চাষের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুগ চাষ মার্চে হয় বলে এখনো জমির পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি।

কৃষি প্রণোদনা এবং যশোরের চাষাবাদ সম্পর্কে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হক জানান, যশোর এমনিতেই কৃষি উদ্বৃত্তের জেলা। এখানে অনেক জমিতে ৩ ফসল চাষ হয়। চাহিদার চেয়ে বেশি ধান, সবজি উৎপাদিত হয়। দেশের সবজি চাহিদার বিরাট অংশ এখান থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। কৃষকরা নিজেরাই ফসল উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকেন। এছাড়া কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের কর্মকাণ্ডের সাথে থাকে। এর উপর সরকারিভাবে বিভিন্ন ফসলের প্রণোদনা পেয়ে তারা দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ। কেউ জমি ফেলে রাখার চেষ্টা করছেন না। ধীরে ধীরে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রণোদনা পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষদের উৎপাদন খরচ কমছে। সরকারের এই উদ্যোগ কৃষকরা স্বাগত জানিয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram