তহীদ মনি : ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত যশোরে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন পুনঃনির্মিত সেই মঞ্চের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিংবদন্তীতুল্য আলোকচিত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হানকে সংর্বধনা দিয়েছে যশোরবাসী। ক্যামেরা হাতে যে জনসভায় উপস্থিত থেকে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়েছিলেন হামিদ রায়হান, ৫১ বছর পর সেই দিনে সেই মঞ্চেই সংবর্ধিত হতে পেরে আবেগ আপ্লূত হয়ে পড়েন তিনি। তুলে ধরেন নিজের অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দেন উপদেশ।
অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে পুননির্মত যশোর টাউন হল ময়দানের স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গতকাল রোববার। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও যশোর ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তখনো স্বাধীন হয়নি দেশ।
এরই মধ্যে সরকারের প্রথম জনসভা হলো যশোরে। সেদিন ওই ভাষণের ছবি তুলে স্বাধীন দেশের ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়েছিলেন আলোকচিত্রী আব্দুল হামিদ রায়হান। ওই ছবিসহ আরো অনেক দুর্লভ ছবি তুলে কোলকাতায় যেয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকে। বিশ্ব দেখেছিল বাংলাদেশ সরকারের জনসভার দৃশ্য। সেই স্মৃতি স্মরণে নির্মিত হয় স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চ। দীর্ঘদিন পরে হলেও মঞ্চটি সংস্কার করেছে যশোর ইনস্টিটিউট। ১১/১২ তে উদ্বোধন করে স্থাপন করেছে দৃষ্টান্ত। একই সাথে আলোকচিত্রী আব্দুল হামিদ রায়হানের সংবর্ধনা প্রদানও এক অন্যন্য উদাহরণ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও যশোর ইনস্টিটিউটের সভাপতি মো. তমিজুল ইসলাম খান। ১৯৭১ এর সে দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনী প্রধান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি, মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ। স্বাগত বক্তব্য দেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। উপস্থাপনা করেন সাবেক সাংসদ মো. মনিরুল ইসলাম ও যশোর ইনস্টিটিউটের সহ সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু। জাতীয় সঙ্গগীত, দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশনের পর পুননির্মিত মঞ্চের উদ্বোধন হয়। পরে সেদিনের কথা বলে যান বীরমুক্তিযোদ্ধা ও অতিথিরা। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সে সময়ের প্রবাসী সরকারের প্রথম জনসভা যশোরে হয়েছিল এ কথা নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। স্বাধীনতার ১০ দিন আগে ৬ ডিসেম্বর যশোর স্বাধীন হয়েছিল এ সব ইতিহাস ও স্মৃতিচারণ শোনার সময় শ্রোতা ও উপস্থিত দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান। জাতির গর্বিত ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ যশোর, এই টাউন হল ময়দান এবং স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চ। এতকিছু এক সঙ্গে জানতে পেরে উপস্থিত নতুন প্রজন্মের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তারা সম্মাননাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হানকে উপস্থিত সবাই নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানান, করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করেন। এ সময় মঞ্চের সামনে ঐতিহাসিক নিদর্শন সেদিনের ছবি তোলার ইয়াসিকা ৬৩৫ ক্যামেরাটিও প্রদর্শিত হয়।
৯০ বছর বয়সী কুষ্টিয়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা ও আলোক চিত্র শিল্পী আব্দুল হামিদ রায়হান যশোরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সে দিনে ছবি ধারণ করার জন্যে ৮ ডিসেম্বর আগেভাগেই কোলকাতা থেকে যশোরে এসেছিলেন। পথে পথে যুদ্ধের নির্মমতার ছবি তুলেছেন। ১১ ডিসেম্বরের জনসভা কেমন হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কতটা ভালোবাসতেন এ সব বিষয়ও তার প্রতিক্রিয়ায় জানান যশোরবাসীকে। কীভাবে সেদিনই কোলকাতায় ফিরে গিয়ে ছবি সরবরাহ করেছিলেন গণমাধ্যমে তার কিছু স্মৃতিচারণও করেন।