১৩ই জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়তে পারে শরীফ-শরীফার গল্প
পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়তে পারে শরীফ-শরীফার গল্প

সমাজের কথা ডেস্ক : সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে শরীফ-শরীফার গল্প বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। গল্পে ব্যবহৃত ১৯টি শব্দ ‘ইসলাম ধর্ম’ ও ‘বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন কমিটির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গল্পে ১৯টি শব্দ নিয়ে কমিটির কয়েকজন সদস্য আপত্তির কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, শব্দগুলো বাদ দিলে ওই গল্পটি আর পরিপূর্ণ থাকছে না। সেজন্য আমরা গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছি। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সচেতনতামূলক কোনো গল্প নতুন করে লিখে সেটা বইয়ে যুক্ত করা যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে মতামত দেওয়া হয়েছে।’

তবে বিষয়টি নিয়ে কমিটির কেউ সরাসরি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। কমিটির প্রধান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘গল্পটি মূল্যায়ন করে আমরা একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। সেটা ৮-১০ দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনে কী আছে এবং তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কতটুকু বাস্তবায়ন করবে, সেটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে আমি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাই না।’

ঢাকা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, এটুকু বলতে পারি। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়ে আগেই মিডিয়ায় কথা বলাটা আমার কাজ নয়। প্রতিবেদনে কী আছে, সেটা জানার চেয়ে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত কী হয় সেটা জানা জরুরি।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এ নিয়ে আমরা কোনো তথ্য জানি না। মন্ত্রণালয় যদি আমাদেরকে কোনো সংশোধনী বা নির্দেশনা দেয়, সেটা আমরা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবো।’

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

তবে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা হয়েছে, এটা শুনেছি। তাতে কী আছে, সেটা আমরা এখনো জানি না। এ নিয়ে বৈঠক হবে। তখন সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’
কী আছে শরীফার গল্পে?

নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায় রয়েছে। এ অধ্যায়ে বইয়ের ৩৯ নম্বর পৃষ্ঠায় শরীফার গল্প শুরু হয়েছে। গল্পটি মোট ৩৭৪ শব্দের।

গল্পে একপর্যায়ে শরীফ থেকে শরীফা হওয়া ব্যক্তির ভাষ্যে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়, ‘একদিন এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো, যাকে সমাজের সবাই মেয়ে বলে কিন্তু সে নিজেকে ছেলে বলেই মনে করে। আমার মনে হলো, এই মানুষটাও আমার মতন। সে আমাকে বলল, আমরা নারী বা পুরুষ নই, আমরা হলাম তৃতীয় লিঙ্গ (থার্ড জেন্ডার)।’

গল্পের তৃতীয় লিঙ্গ শব্দের ব্যবহার নিয়ে ইসলামে আপত্তি রয়েছে বলে মনে করেন কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্যরা। তাদের মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগেও হিজড়া ছিল। তাদের ব্যাপারে ধর্মীয় স্পষ্ট বিধানও রয়েছে। এ নিয়ে কোনো সংশয় বা অস্পষ্টতা নেই। তবে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দ নিয়ে ইসলাম ধর্মে আপত্তি রয়েছে।

গল্পের একপর্যায়ে শরীফ থেকে শরীফা হওয়া ব্যক্তি তার জীবনের কথা বলতে শুরু করেন। তার ভাষ্যে বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, ‘ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলতো। কিন্তু অমি নিজে একসময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালোবাসতাম।’

‘শরীফ’-এর শারীরিক অবয়ব ছেলেদের মতো। কিন্তু তিনি নিজেকে মেয়ে ভাবতেন। ছেলে লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নিয়েও নিজেকে মেয়ে ভাবার এ প্রবণতা ইসলামে স্পষ্টই হারাম ও গর্হিত কাজ বলে মনে করেন কমিটির দুজন বিশেষজ্ঞ।

শরীফার গল্পে ‘গুরু মা’ নামের একজন চরিত্রও আছেন। যেখানে হিজড়ারা একসঙ্গে থাকেন, সেখানে সবার দেখভাল করেন তিনি। বলা চলে তিনিই ওই দলের নেতা। কমিটির বিশেষজ্ঞদের মতে, গুরু মা বিষয়টি গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরে প্রমোট করা হচ্ছে। এটা করা যাবে না।

শরীফার গল্পের শেষে শিক্ষার্থীরা কিছু প্রশ্ন তুললো। এরপর ছেলেদের জিনিস ও মেয়েদের জিনিস নিয়ে আলোচনা পর্ব চললো। এরপর শ্রেণিশিক্ষক খুশি আপা বললেন, কয়েকটা প্রশ্নের মাধ্যমে আমরা চিন্তার খোরাক পেতে পারি। তখন ক্লাসের শিক্ষকরা কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করলেন।

সেখানে তৃতীয় প্রশ্নে বলা হচ্ছে, ‘একজন মানুষকে বাইরে থেকে দেখেই কি সবসময় সে ছেলে নাকি মেয়ে তা বোঝা যায়?’ শেষ প্রশ্নটি হলো- ‘এমনটি কি হতে পারে যে, কাউকে আমরা তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে, গলার স্বর শুনে ছেলে বা মেয়ে বলে ভাবছি। কিন্তু সে নিজেকে ভিন্ন কিছু ভাবছে? পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে এ দুটি প্রশ্নও কিছুটা পরিমার্জন করা যেতে পারে বলে মনে করেন কমিটির একাধিক সদস্য।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram