সমাজের কথা ডেস্ক : অভিযোগ ছিলই। এখন শক্ত প্রমাণ সামনে হাজির। পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোটচুরি, ফল পাল্টে দেওয়ার ন্যক্কারজনক চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে রাওয়ালপিন্ডির নির্বাচন কমিশনার ফল পাল্টে ফেলায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বেচ্ছায় প্রকাশ করার পর ভোট গণনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জোরাল হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকার গঠনের সমীকরণ জটিলতর হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডনের অনলাইন সংস্করণে সরাসরি প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেই পাকিস্তানের জনগণ চায় বলে মন্তব্য করেছে তার দল। পাকিস্তান তেহরিক—ই—ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্ররা সরকার গঠনে ইচ্ছুক ও প্রস্তুত বলেও তারা দাবি করেছে।
<<আরও পড়তে পারেন>> পাকিস্তানের নির্বাচন বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ইমরানের দল নির্বাচন করতে পারেনি। তবে তাদের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নেন। অন্য প্রধান দুটো দল ছিল নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ—এন (পিএমএল—এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে একটি ছাড়া সব আসনে ভোট হয়েছে। সরকারিভাবে ভোটের পুরো ফল ঘোষণা করা হয়নি। তবে এ পর্যন্ত ঘোষিত ফলে দেখা যাচ্ছে, স্বতন্ত্ররা অন্তত ১০১টি আসনে জিতেছেন, তাদের মধ্যে ৯৩ জন স্বতন্ত্রই ইমরান—সমর্থিত। যেহেতু তারা স্বতন্ত্র, তাই একক রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার দাবি নওয়াজের, পিএমএল—এন পেয়েছে ৭৫টি আসন। বিলাওয়ালের পিপিপি পেয়েছে ৫৪টি আসন।
সরকার গঠনে দরকার ১৩৪টি আসন। ফলে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এদিকে স্বতন্ত্ররা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে সরকার গঠনে অংশ নিতে পারবে। এদিক থেকে ইমরানের স্বতন্ত্রদের সামনে বিকল্পগুলো অত জোরাল নয়, তবে অসম্ভবও নয়।
পিটিআই নেতা মেহের বানু কুরেশি গতকাল এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, জনগণের রায় বাস্তবায়নে তাদের দল কেন্দ্রে সরকার গঠনে ‘ইচ্ছুক ও প্রস্তুত’। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, নিজেদের রায় ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে— এটা দেখে চুপ করে বসে থাকা জনতার উচিত হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোট ও তাদের কণ্ঠস্বরকে রক্ষা করব।’
পিটিআই কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে পারলে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন সাবেক সেনাশাসক আইয়ুব খানের নাতি ওমর আইয়ুব খান। এই নেতা পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলকে জনরায় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জনগণ আসলে ইমরান খানকে চায়। তার ভাষায়, ‘যেসব দল এমনকি ৪০টা আসনও জেতেনি, সেগুলো এবং অন্য সব দলের উচিত জনগণের কথা শোনা। তারা ইমরান খানকে তাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছে। তারা উন্নত পাকিস্তান চায়।’
ভোটচুরির অভিযোগ তুলে ওমর আইয়ুব খান বলেন, এমন নির্বাচনী প্রহসনে ফায়দা লুটছে পিএমএল—এন ও পিপিপি। তিনি আরও বলেন, তিন কোটি পাকিস্তানি পিটিআই ও ইমরানের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, কারণ ‘গভীর মন্দা থেকে পাকিস্তানকে তারাই রক্ষা করতে পারে এবং তারাই এই দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারে।’
এদিকে নওয়াজ ও বিলাওয়ালের দল জোট সরকার গঠনের কথা বললেও এখনো ক্ষমতা ভাগাভাগির দরকষাকষিতে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। পিপিপির চেয়ারম্যান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল যেমন গতকাল সিন্ধু প্রদেশে এক সভায় বলেছেন, ‘আমাকে ওরা প্রস্তাব করেছে, প্রথম তিন বছর তারা প্রধানমন্ত্রিত্ব করবে, এরপর আমাকে দুবছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব দেবে। আমি তাদের না করে দিয়েছি। আমি এভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। যেদিন পাকিস্তানের জনগণ আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করবে, সেদিনই দায়িত্ব নেব।’