নিজস্ব প্রতিবেদক : মাত্র ৪০ হাজার টাকার চুক্তিতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে খুন করা হয় মণিরামপুরের মৎস্য আড়তের ম্যানেজার জসিম উদ্দিনকে। জসিমের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া স্ত্রী ও কন্যাকে ফেরাতে না পেরে প্রেমিককে শায়েস্তা করার পথ বেঁছে নেন বারান্দীপাড়ার হাবিবুর রহমান। শায়েস্তা করার দায়িত্ব নেন হাবিবুরের ভাগ্নে ইব্রাহিম। আটক দুই আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৩০ জুন প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুলিশ জানায়, যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার আনোয়ারা খাতুন আনু নামে এক গৃহবধূর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে ছিলেন জসিম। এ পরকীয়ার জের ধরে আনুর সাথে দেখা করে ফিরে যাওয়ার পথে খুন হয় জসিম। এই হত্যাকান্ডের প্রধান কিলার ইব্রাহিম পালিয়ে থাকলেও দুই আসামিকে পুলিশ আটক করেছে।
এই হত্যাকাজে ব্যবহৃত দুইটি চাকু ও একটি হাংক মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আটক দুইজনকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন আদালতে। আটককৃতরা হলো, যশোর শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়ার লাল মিয়ার ছেলে নাসির হোসেন (৩০) ও বেজপাড়া তালতলা আনসার ক্যাম্প এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে জাহিদ হোসেন ডুবার (২৩)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আনুর সাথে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে ছিলেন মণিরামপুরের ভাই ভাই গোল্ডেন ফিসের ম্যানেজার উপজেলার হাকোবা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩০)। আবার আনুর মেয়ে আয়শা খাতুনের সাথেও জসিমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
এ পথ থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে একাধিকবার জসিমকে অনুরোধ করেন হাবিবুর রহমান। কিন্তু কোন মতেই জসিম ওই পথ থেকে সরে আসতে রাজি হয়নি। ফলে আনোয়ারা খাতুন আনুর ভাগ্নে ইব্রাহিমকে এই ঘটনাটি জানান হাবিবুর রহমান। ইব্রাহিম বিষয়টি নিয়ে নাসির হোসেন ও জাহিদ হোসেন ডুবারের সাথে ৪০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন।
গত ২৬ জুন সন্ধ্যায় একই আড়তের কর্মচারী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে রিপনের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে যশোরে আসে জসিম। তবে জসিম আসার সময় আনোয়ারা খাতুনের জন্য এক কেজি রান্না করা ছোলা নিয়ে আসে। যশোরের ব্যাটারি পট্টিতে এসে আনোয়ারাকে রান্না করা ওই ছোলা দিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। সাথে থাকা রিপন মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল।
ফেরার পথে যশোর শহরের বকচর সাব্বির ফ্লাওয়ার মিলের সামনে পৌছানো মাত্র তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে অপর মোটরসাইকেলে আসা তিনজন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা জসিমকে জোর করে নামিয়ে নিয়ে নাসির, ডোবার ও ইব্রাহিমের হাতে থাকা বার্মিজ চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এরই মধ্যে জীবন ভয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে মুড়লী মোড়ের দিকে চলে যায় রিপন। সেখান থেকে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে।
এরপরে স্থানীয়রা জসিমকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে এই ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুল কুদ্দুস ২৭ জুন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই শরীফ আল মামুন ডিবি পুলিশের সহায়তায় ৩০ জুন ভোর রাতে প্রথমে নাসির হোসেন ও পরে ডুবারকে বাড়ি থেকে আটক করে। তবে আটক জাহিদ ওরফে ডোবারের কাছ থেকে জসিমকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুইটি বার্মিজ চাকু ও একটি হাংক মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়। ওইদিনই তাদের দুইজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার আদালতে এই হত্যাকান্ডে আটক দুইজনকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশ জানিয়েছে, আটক ডুবারের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ আরো সাতটি মামলা রয়েছে।