সমাজের কথা ডেস্ক : ছয় মাস কারাভোগ শেষে মুক্তি পাওয়ার দুদিন পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টি (এএপি)-এর নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। রবিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে একটি দলীয় সভায় এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তার এমন ঘোষণায় হতবাক হয়েছেন বিরাধীনেতাসহ তার সমর্থকরাও। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এই খবর জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কেজরিওয়াল বলেন, ‘দুই দিন পর আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করব। জনগণ তাদের রায় ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমি দায়িত্বে ফিরব না। দিল্লিতে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। আমি আইনি আদালত থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন জনগণের আদালতে থেকে ন্যায়বিচার চাই।’
সভায় একটি নাটকীয় আবহ তৈরি করেন কেজরিওয়ার। তিনি বলেন, ‘জনগণের নির্দেশে আমি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসব। আমি দিল্লির জনগণকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, কেজরিওয়াল কি নির্দোষ নাকি দোষী? আমি যদি আপনাদের জন্য কাজ করে থাকি তবে আমাকে ভোট দিন।’
নিজের পদ নিয়ে জনতার কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন কেজরিওয়াল। জেল থেকে ফিরে স্বপদে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের প্রচেষ্টায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাই কেজরিওয়ালের দল এএপি রাজধানী দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য আগামী দুই দিনের মধ্যে দলীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা করবে।
এএপি নেতা বলেছেন, তার পদত্যাগের পর দলের একজন সদস্যকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কেজরিওয়াল বলেন, তিনি জনগণের কাছে তাদের সমর্থন চাইবেন। এসময় ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত দিল্লির নির্বাচন মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের সঙ্গে নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
এএপি কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সর্বাত্মক আক্রমণ করেন কেজরিওয়াল। এই সরকারকে ব্রিটিশদের চেয়েও স্বৈরাচারী বলে অভিহিত করেন তিনি।
কেজরিওয়ালের দাবি, গণতন্ত্র বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলেই গ্রেফতার হওয়া পরও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি তিনি। তার বক্তব্যে, ‘তারা (কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী) সিদ্দারামাইয়া, (কেরালার মুখ্যমন্ত্রী) পিনারাই বিজয়ন, (বাংলার মুখ্যমন্ত্রী) মমতা দিদির (বন্দোপাধ্যায়) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আমি অ-বিজেপির কাছে আবেদন করতে চাই, তারা যদি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করে তবে পদত্যাগ করবেন না। এটি তাদের নতুন খেলা।’
এ বিষয়ে সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার সঙ্গেও আলাপ করার কথা জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। দিল্লির বাতিল করা আবগারি নীতিকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে সিসোদিয়াকেও সম্প্রতি জামিন দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলছিলেন, ‘আমি মনীশের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও বলেছেন, মানুষ যখন বলবে আমরা সৎ, তখনই তিনি নিজ পদে পুনরায় দায়িত্ব নেবেন। আমার ও সিসোদিয়ার ভাগ্যও এখন আপনাদের হাতে।’
কেজরিওয়ালের এমন কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির হরিশ খুরানা প্রশ্ন তোলেন, কেন এএপি নেতা এমন নাটক করছেন? তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা পরে কেন? আজই তার পদত্যাগ করা উচিত। অতীতেও তিনি এমন করেছেন। দিল্লির মানুষ জানতে চায়, তিনি সচিবালয়ে যেতে পারবেন না, নথিতে সই করতে পারবেন না? তাহলে লাভ কী?’
বিজেপি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে খুরানা বলেন, ‘আজ হোক বা কাল, আমরা প্রস্তুত। আমরা ২৫ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরব।’
দিল্লি কংগ্রেস কেজরিওয়ালের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, কখনও না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হলেও এটি হয়েছে।
দিল্লির কংগ্রেস প্রধান দেবেন্দ্র যাদব বলেন, ‘দিল্লি বন্যা ও পানীয় জলের সংকটের মুখোমুখি হলে, তখন তিনি পদত্যাগ করলে বরং ভালো হতো। আমি আশা করি, দিল্লি শিগগিরই একজন নতুন মুখ্যমন্ত্রী পাবে, যিনি তার কার্যালেয়ে গিয়ে নথিপত্রে স্বাক্ষর করতে পারবেন।’