নেংগুড়াহাট (মনিরামপুর) প্রতিনিধি : মনিরামপুর উপজেলা নেংগুড়াহাটের বিভিন্ন গ্রামঅঞ্চলের চলছে এখন কুমড়ো বড়ি তৈরী উৎসব।শীত মানে আনন্দন শীতমানে উৎসাব হিমেল বাতাসে বইছে হাওয়া শিশিরে ভিজছে লতাপাতা। নানা রকম সবজি,পিঠাপুলী আর উৎসবের বার্তা নিয়ে আগমন হয়েছে শীত। শীতের আমেজ যেন গ্রামেঅঞ্চলে সাড়া ফেলে বেশি শীত,আসার সাথে সাথে যেমন উৎসবের ধুম পড়ে যায়,তেমনই ধুম পড়ে যায় কুমড়ো বড়ি বানানোর উৎসাব। শীত শুধু গ্রাম বাংলার উৎসব পার্বনের ঋতু নয়,লোকায়িত ঐতিহ্যনুসারে শীতকাল কুমড়ো বড়ির মৌসুম।শীতের আগমনের শুরু থেকেই গ্রামের নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন,কুমড়োর বড়ি বানাতে। কিশোরী থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের নারীরা,এই কুমড়ো বড়ি বানাতে অংশ গ্রহন করেন। কুমড়ো বড়ি বানানো তাদের কাছে একটি উৎসবের মতো,শীতের আগমনের মনিরামপুর উপজেলার নেংগুড়াহাটের বিভিন্ন গ্রামের অঞ্চলের। গৃহবধূরা কুঁমড়া আর কলাই ডালের তৈরি বড়ি বানাতে এখন ব্যস্তসময় পার করছেন। শীতকে স্বাগত জানিয়ে প্রত্যেকটি গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে কলাই আর চালকুঁমড়া দিয়ে বড়ি বানানোর মহোৎসব। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের বড়ি তৈরির রাঙা উৎসব, শীতের শুরুতেই পাড়া মহল¬ার গৃহিণীরা একত্রিত হয়ে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে তৈরি এমজাদার খাবার তৈরিতে বেশ ব্যস্ত। ভোরে সূর্য ওঠার আগেই,উঠে কেউ ছুটছেন ঢেঁকির কাছে,কেউ শীলপাটা,কেউবা আবার বড়ি শুকানো নেট-জালের কাছে। আবার অনেকে যাচ্ছেন বৈদ্যুতিক মেশিনের কাছে,সবার উদ্দেশ্য খাবার টেবিলের বাড়তি স্বাদের জন্য,বড়ি তৈরির মূল উপাদান বানানো। জানাযায়,গ্রাম যতগুলো ঐতিহ্য প্রবহমান তার মধ্যে অন্যতম একটি চালকুঁমড়ার তৈরি বড়ি। শীত মৌসুম মানেই গ্রাম মানুষের নতুন নতুন খাবার তৈরির মৌসুম,শীতের পিঠা ক্ষির পায়েশের পাশাপাশি চালকুঁমড়া আর ডালের তৈরি বড়ি। একটি সুস্বাদু খাবার বলে পরিচিত,শীতের দিনে গৃহিণীর রান্না করা প্রতিটি তরকারির সঙ্গে যদি বড়ি না থাকে তাহলে খাবার যেন অপূরণীয় থেকে যায়। সেইবড়ি বানানোর কাজে নেংগুড়াহাট এলাকায় প্রতিটি গ্রামের গৃহবধূরা ব্যস্তসময় পার করছে। বড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়,কালো কলাই ও চাল-কুঁমড়া,কলাই পাথরের যাতাই মাড়াই করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে। পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়,এর সঙ্গে যোগ হয় পাকা চাল কুঁমড়া। গৃহিণীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে চাল কুঁমড়ার ভেতর থেকে তার মুল উপাদান কুরে কুরে বের করেন। এরপর উভয় উপাদান মিশিয়ে ঢেঁকি বা যাতায় পিষে পেস্টের মতো সাদা একটি উপাদান তৈরি করেন,এই উপাদান তৈরিতে গ্রাম্য বধূদের খুব পরিশ্রম করতে হয়। এক সময় বড়ির এ উপাদান তৈরি করতে কেবলমাত্র ঢেঁকি ব্যবহার করা হলেও বর্তমান ডিজিটাল যুগে বেশ পরির্বতন এসেছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি যখন বিলুপ্তির পথে তখন এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিন। চালুুয়াহাটি ইউনিয়নের রতেœশাহাপুর গ্রামের নাজির কারিকারের স্ত্রী,একই গ্রামের এক গৃহবধূ বলেন,শীত এলেই আমাদের। গ্রাম অঞ্চলের লোকজন বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন,পাড়ার মহল¬ার অনেক পরিবার একত্রিত হয়ে তারা বড়ি তৈরী করেন। ধনী-গরিব সবাই এবড়ির প্রতি দুর্বল কেননা বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন,লাউ,ফুলকপি, আলু ইত্যাদি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা,বড়ি হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিæ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাছ মাংসের সমান। বড়ি তৈরীতে ব্যস্ত গ্রামীণ নারী সুমি ও মনোয়ারা বলেন,শীত এলেই গ্রামে একে অপরকে বড়ি দিতে সহযোগিতা করা আমাদের রেওয়াজ রয়েছে। তাই কিন্তু নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ মেয়েরা,এসব শিখতে বা তৈরি করতে আগ্রহী নয়। স্থানীয় কিছু নারীরা বলেন,যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে,বেশিরভাগ বাড়িতে কুমড়ো বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। এসময়ের কালের আবর্তে বড়ি এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তারপরও অনেক মানুষ বাড়িতে বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে করেন।