বিশেষ প্রতিনিধি : আসন্ন নির্বাচনে যশোরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরণের অপতৎপরতা প্রশাসন বরদাস্ত করবে না। রোববার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার এই বার্তা দিয়েছেন।
সভায় কমিটির সদস্যরা বলেন, যশোরে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব বেড়েছে এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ভাড়াটিয়া হিসেবে অপতৎপরতা চালাতে পারে। এর প্রেক্ষিতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন কিশোর গ্যাংয়ের সকল অপতৎপরতা কঠোরভাবে রোধ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও সভায় শহরের সড়ক যানজটমুক্ত করণের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারণ নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়। আলোচনা হয় শহরের ফুটপাত দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ বিষয়েও। পৌর এলাকায় ৯৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন ছাড়াও অতিরিক্ত ক্যামেরা বসিয়ে শহরের আইন—শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে ব্যক্তি উদ্যোগে সহায়তা চাওয়া হয় পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে। গতকাল রোববার জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে জেলা আইন—শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মাসিক সভায় এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় আলোচনাকালে জানানো হয়, শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দাপট বেড়েছে। তারা অবৈধ অস্ত্র ও চাকু ব্যবহার করে প্রভাব বৃদ্ধি করছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাঠেও এদের ব্যবহার করা হতে পারে। তাদেরকে এখনই নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। শুধু কিশোর গ্যাং নয়; মাদক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। জানানো হয় কিশোর গ্যাংয়ের সকল অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন ঘিরে সব ধরণের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দেবে প্রশাসন। সভায় র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় গত ৪ মাসে শুধু র্যাবই ১৮টি অবৈধ আগ্নেয়অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
প্রতিমাসে মাদক উদ্ধারও করছে র্যাব। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিশোর গ্যাং ও চাকুর বিরুদ্ধে পুলিশ বেশ তৎপর। কিছু অভিযান চালানো হয়েছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা কেউ কেউ আটক হয়েছে, উদ্ধার হয়েছে মাদকদ্রব্যও। মাদক উদ্ধার ও মামলার কথা জানায় বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আসন্ন ভোট উপলক্ষে প্রশাসনের তৎপরতা আরো বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে আইন—শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জানানো হয়, যেহেতু ভোট আসছে তাই নানা জনের নামে ভুয়া চিঠি চালাচালি শুরু হবে। ইতোমধ্যে মণিরামপুর থেকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। যেখানে যেভাবে যে চিঠি যাক, প্রশাসন ও পুলিশসহ সবার উচিত স্বাক্ষরকারীর নাম ঠিকানা যাচাই করা এবং মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়া। না হলে অভিযোগ—পাল্টা অভিযোগের কারণে ভুল বোঝাবুঝি ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে।
এদিকে সভায় প্রতিবারের মতো আবারও শহরের যানজট, রাস্তা দখল, ফুটপাথে ব্যবসা বৃদ্ধির কথা আলোচিত হয়। এ সময় জানানো হয় শহরের প্রতিটি সড়কে যানজট বেড়েছে, শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। বার বার চেষ্টা করেও এর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
সাধারণ মানুষ ও যাত্রী অনিরাপদ হয়ে উঠছে। প্রতিদিন জেলা হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনাক্রান্ত যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন তার ৯০ শতাংশ ইজিবাইক ও ইঞ্জিন রিকসার কারণে ঘটছে। ওই বাহনের ব্রেক শক্তিশালী না, ইচ্ছেমতো ও বেপরোয়া গতিতে কারণে এই বাহনে দুর্ঘটনা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইজিবাইক ও ইঞ্জিন চালিত রিকসা শহরের যানজট বাড়াচ্ছে। এ সময় পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ জানান, শহরে ইঞ্জিন চালিত রিকসা ও ইজিবাইক কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, কিন্তু গরীব মানুষের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে এমন দাবি করে অনেক প্রভাবশালী সুপারিশ করেন।
তিনি আরো জানান, ফুটপথ দখল মুক্ত করতে হকারদের আলাদা জায়গায় দেয়া হয়েছে তবুও এর অবসান হচ্ছে না।
শহরের রাস্তা ও ফুটপাথসহ বিভিন্ন জায়গা দখল নিয়েও কথা হয় সভায়। জানানো হয়, ভৈরব ও নিউ ভৈরব নামের হোটেল দুটি সড়কের ২০ ফুট জায়গা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন বা পৌর প্রশাসন নিরবতা পালন করছে।
সভায় জেলখানার পাশে ও বিএড কলেজের সামনে সরকারি জায়গা দখল করে জুয়ার আড্ডা গড়ে উঠেছে বলে সভায় জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. মো. ইসহক, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খাতুন, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু প্রমুখ।