এটি সর্বজনবিদিত যে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যথার্থ ধারণ ও পরিচর্যা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রে উন্নয়ন—অগ্রগতির প্রণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ। আপামর জনগণের সামষ্টিক চিন্তা—চেতনার প্রতিফলনে বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় অবাধ—সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাই প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট পরিচায়ক।
মূলত সকল দল—মতের সম্মিলিত অংশগ্রহণ—সমর্থনে নেতৃত্ব বাছাই এবং সঠিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা গণতন্ত্রকে শক্তিমান করে। গণতন্ত্র হলো আধুনিক বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সমাদৃত শাসন ব্যবস্থা, যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বত্রই সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল।
বিপুল পরিবর্তন—পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে বর্তমানেও গণতন্ত্র সমধিক জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থার রূপ পরিগ্রহ করে চলেছে। গণতন্ত্র যে কোনো সমাজে পরিশুদ্ধ পন্থায় সমগ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধনে রাষ্ট্র বা সরকার পদ্ধতিকে নির্দেশ করে। একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের বিপরীতে জনগণের শাসন বা শাসননীতির ইচ্ছানুসারে পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সাবলীল ধারণা—ধারাবাহিকতার সুস্পষ্ট বহিপ্রর্কাশ। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে সৌকর্যের তাৎপর্যপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। সুদৃঢ় কাঠামোয় গঠিত দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী উলে¬খ্য নির্বাচন আয়োজনের নির্ভরতম দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশন।
পবিত্র সংবিধানের বাধ্যবাধকতা সুরক্ষায় চলমান সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধার্য করেছে। সংবিধানে বর্ণিত বিধি—বিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন যথার্থ পন্থা অনুসরণে নির্বাচনী তফসিলও ঘোষণা করেছে। সামগ্রিক যাচাই—বাছাই শেষে প্রার্থিতার বিষয়টি চূড়ান্ত ও প্রতীক বরাদ্দের পরপরই দেশব্যাপী উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজিত। নগর—শহর—গ্রামীণ জনপদেও দল—জোট—স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় যৌক্তিক কৌশল অবলম্বন প্রশংসনীয়। দুই—একটি সংসদীয় এলাকায় কিছুটা সহিংসতা প্রকাশ পেলেও নির্বাচন কমিশন তার প্রতিকারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে দল—মত নির্বিশেষে অনেক প্রার্থীকে শোকজ—আর্থিক জরিমানাসহ নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকার কাঠামো নির্ধারিত হয় একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের কল্যাণে। জনগণের অধিকাংশ রায় নির্বাচনে জয়—পরাজয় সকল প্রার্থীর সাদরে বরণ করা বাঞ্ছনীয়। নির্বাচনে কারচুপি—শক্তি—অর্থ ও ক্ষমতা প্রয়োগ পরিহার করে স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন্য স্বাভাবিক—শাশ্বত পরিবেশ একান্ত জরুরি। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা—সন্ত্রাস—জঙ্গি কার্যক্রম—বিরোধ—বিচ্ছেদের রসায়নে সহিংসতামুক্ত নির্বাচনই সবার কাম্য।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শান্তি—শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ও অন্যান্য আইনের বিধান অনুসারে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের ৭ম ও ১০ম অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা বা থানায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে। উলে¬খ্য পদক্ষেপ নির্বাচনকে প্রভাব—হস্তক্ষেপমুক্ত করে জনগণের আকাক্সিক্ষত সুষ্ঠু—অবাধ—শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অতিশয় অনুপ্রেরণার বিষয় হিসেবে প্রতিভাত হবে।