নানা ধরনের উদ্বেগ—উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জোর প্রচার করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন পরিচালনা র্কর্তৃপক্ষ মুখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছেন, প্রার্থীরা ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের সবাই জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে প্রচার—প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় দেশের একজন দায়িত্বশীল মুমিন নাগরিক হিসেবে সচেতনতার পাশাপশি নিজের দ্বীন ও ইমান রক্ষায় সজাগ সতর্ক থাকা কর্তব্য। গিবত (পরনিন্দা), মিথ্যাচার, মিথ্যা অপবাদ ইত্যাদি বিষয় ইসলামে সবসময়ের জন্যই নিষিদ্ধ। দায়িত্ব—বহির্ভূত অযথা বাক্যালাপ, তর্কবিতর্ক, কোনো সময়ই সুফল বয়ে আনে না। এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন মিথ্যা কোনো বিষয়ে না হয়।
কোনো বিষয়ে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে প্রার্থী হওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন এবং কীভাবে এই গুরুদায়িত্ব একজন যথার্থ সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত হতে পারে তার যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত নির্দেশনা ইসলামে রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা হওয়া প্রয়োজন। দেশে সৎ ও কল্যাণমুখী রাজনীতির ধারা সৃষ্টি করতে এর বিকল্প নেই।
বর্তমানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের যে পদ্ধতি প্রচলিত, তা যে ত্রুটিমুক্ত নয় সেটা প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সাম্প্রতিক আন্দোলন—পাল্টা আন্দোলন থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু এখন এ ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি এবং এর চেয়েও ত্রুটিপূর্ণ সরকার ব্যবস্থাই যেহেতু নিষ্ঠুর বাস্তবতা, তাই এ ভোটাভুটির ব্যাপারেও শরিয়তের নীতিমালা জেনে নেওয়া আবশ্যক।
নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো, তার সততা ও যোগ্যতার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করা। কেননা যিনি কোনো দায়িত্ব বা পদপ্রার্থী হন তিনি সেই পদ বা দায়িত্বের জন্য নিজেকে যোগ্য বলে দাবি করেন। আর দায়িত্ব অর্পিত হলে বিশ্বস্ততার সঙ্গে তা পালনের প্রতিশ্র“তি তো প্রার্থীরা খুব জোরেশোরেই প্রচার করে থাকেন। এ অবস্থায় কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ তার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া। ওই পদে বরিত হওয়ার জন্য তার পক্ষে সুপারিশ করা এবং একটি সামাজিক দায়িত্ব, যেখানে অসংখ্য মানুষের হক ও অধিকার সংশি¬ষ্ট, সেখানে তাকে নিয়োগ দানের পক্ষে মত প্রদান করা। এই সবগুলো বিষয় এখানে রয়েছে।
শরিয়তে সাক্ষ্য, সুপারিশ ও মত প্রদানের গুরুত্ব ও দায় অপরিসীম। কোরআন মাজিদে যেমন সাহসিকতার সঙ্গে সত্য সাক্ষ্য দিতে আদেশ করা হয়েছে এবং সাক্ষ্য গোপনকারীর অন্তরকে পাপী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তদ্রƒপ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকেও মারাÍক কবিরা গোনাহরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কারও পক্ষে বা বিপক্ষে সুপারিশ করার ব্যাপারে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ভালো সুপারিশ করে সে এর কারণে (সওয়াবের) হিস্যা পাবে। আর যে ব্যক্তি মন্দ সুপারিশ করবে তাকেও এর কারণে পাপের দায় কাঁধে নিতে হবে।’ তদ্রƒপ জনসাধারণের হক ও স্বার্থসংশি¬ষ্ট ব্যাপারাদিতে মত প্রদান করা যে খুবই চিন্তা—ভাবনা ও দায়িত্বশীলতার দাবিদার তা তো বলাই বাহুল্য।
এভাবে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ভোট প্রদানের ব্যাপারটিকে ততটা হালকা মনে করার সুযোগ থাকে না, কার্যত একে যতটা হালকা ভাবা হয়। এক কাপ চা কিংবা নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের বিগলিত অনুরোধে প্রভাবান্বিত হয়ে এই আমানতে খেয়ানত করারও অবকাশ থাকে না।
দেশের সর্বস্তরের জনগণকে যদি এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা যায় তবে সেটাই হবে প্রকৃত দেশপ্রেম। তুলনামূলক সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরাও যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় আসতে সক্ষম হন তাহলেও দেশ ও জাতি তুলনামূলক কম ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং এদেশের বঞ্চিত জনতার ভাগ্যে পরিবর্তন সূচিত হবে এ আশা খুব সহজেই করা যায়।