১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কঠোর বিধিমালা আসছে

সমাজের কথা ডেস্ক : মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করছে বাংলাদশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এতে চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিদদের দিয়ে খাবারের অসত্য গুণগান বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি নিজেদের খাদ্যপণ্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করার মতো নানান ধরনের অসংগতি রোধে পদক্ষেপের কথা বলেছে বিএফএসএ।

এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন ও দাবি) প্রবিধানমালা, ২০২৪’ আইনের খসড়া। এখন অপেক্ষা অংশীজনের মতামতের। এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয়ে খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ভেটিংয়ের (পরীক্ষা—নিরীক্ষা) জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে।

<<আরও পড়তে পারেন>> ৫ লাখ শিক্ষক—কর্মচারীর জন্য সুখবর

২০২১ সালে এ আইন প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল বিএফএসএ। ওই বছর ‘নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন) প্রবিধানমালা, ২০২১’ নামে আইনটির খসড়া ভেটিংয়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এরপর ওই আইনে ‘রোগের ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত দাবি’ অপরাধ হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে উল্লেখ ছিল, যা বাদ দেয় আইন মন্ত্রণালয়। তবে তাতে বাধ সাধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। ওই দাবি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আইনে রাখার কথা বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।

এরপর আইনে পুনরায় সব দাবি যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কিছু দাবি অপরাধ হিসেবে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফিরিয়ে আনা হয় ওই প্রবিধানমালা। এর তিন বছর বাদে আবারও নতুনভাবে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।

খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অসত্য তথ্য দিলে, বিজ্ঞাপনের ভাষা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করলে, অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করলে কিংবা সমজাতীয় খাদ্যপণ্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করলে জরিমানার বিধান থাকছে।

শুরু থেকেই এ আইন নিয়ে কাজ করছেন বিএফএসএ’র সাবেক সদস্য রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বিভ্রান্তিকর বা অমূলক বিজ্ঞাপন বন্ধের উদ্দেশ্যেই এ প্রবিধানমালা করা হচ্ছে। ভোক্তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে তাদের দাবির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কোডেক্সের নীতিমালাও অনুসরণ করা হয়েছে।’

রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে এ কাজ শুরু হয়। এরপর কিছু সমস্যা ছিল, যা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে মিল করার জন্য ফিরিয়ে আনা হয়।’

প্রবিধানমালা অনুযায়ী কেউ খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অসত্য তথ্য দিলে, বিজ্ঞাপনের ভাষা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করলে, অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করলে কিংবা সমজাতীয় খাদ্যপণ্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করলে জরিমানার বিধান থাকছে।

এছাড়া খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের শর্ত, পুষ্টি সংক্রান্ত দাবির শর্ত, লবণ অসংযোজন সংক্রান্ত দাবি, সংযোজন দ্রব্যের ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্যাবলি, স্বাস্থ্য সহায়ক দাবি, নিষিদ্ধ দাবি সংক্রান্ত বিষয়, চিনির অসংযোজন সংক্রান্ত দাবি, বিজ্ঞাপন বিষয়ক অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করলে কী কী শাস্তি পাবে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

এ প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচার করলে কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ ওই বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে পারবে। প্রবিধিমালায় এই এখতিয়ারের বিষয়েও বলা হয়েছে।

আইনের খসড়া এখন দেওয়া হয়েছে অংশীজনের মতামত গ্রহণের জন্য। গত ১২ ফেব্রুয়ারি খসড়া উপস্থাপন ও অংশীজনের মতামত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অংশীজনরা তাদের মতামত দিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপনে ‘প্রাকৃতিক’, ‘নতুন’, ‘বিশুদ্ধ’, ‘আসল’, ‘ঐতিহ্যবাহী’, ‘খাঁটি’, ‘আদি’, ‘সেরা’ ইত্যাদি বিশেষণ সম্বলিত ট্রেডমার্ক, ব্র্যান্ড নাম বা অভিনব নাম ব্যবহার করা গেলেও সেটির ব্র্যান্ড নাম বা ট্রেডমার্ক হিসেবে কমপক্ষে ৩ মিলিমিটার আকারের একটি বিবৃতি থাকতে হবে।

এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা শেখ ফেরদৌস আরাফাত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অংশীজনই এ আইনের বিষয়ে বিরোধপূর্ণ মতামত দেননি।’

তবে, ২০২১ সালে অংশীজনদের মধ্যে বিজ্ঞাপন নির্মাতা সংস্থাগুলো কিছু বিষয়ে বিরোধিতা করেছিল। কোনো চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, খাদ্য সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে পারবেন না— এ ধারার বিরোধিতা করেছিলেন তারা। এবার এসব সংস্থা এখনো তাদের মতামত দেয়নি।

দেশি বা বিদেশি কোনো কোম্পানিও এ আইনের বিষয়ে এখনো কোনো মতামত দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় নেসলে বাংলাদেশের হেড অব লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স রেবেকা শারমিনের কাছে।

রেবেকা শারমিন বলেন, ‘প্রবিধানমালা নিয়ে আমরা অবগত। এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লিগ্যাল টিম মার্কেটিং কমিউনিকেশনে যারা কাজ করছেন তাদের নিয়ে স্টেকহোল্ডার মিটিং করবো। সেখানে কোনো সমস্যা মানে যা এ ইন্ডাস্ট্রির জন্য বাধা কিংবা প্রয়োগ সম্ভব নয়— এমন হলে সেগুলো প্রপোজাল হিসেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’

অংশীজনদের কোনো আপত্তি না থাকলে শিগগির প্রবিধানমালার খসড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে। পরে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিংয়ের জন্য।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram