সমাজের কথা ডেস্ক : জমির নামজারি করতে ঘুষের অংক নির্ধারণ করে দেওয়ার ঘটনায় পিরোজপুরের নাজিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ ২০ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তার সহকর্মীদের নামজারি মামলায় অবৈধ অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন।
ফাঁস হওয়া অডিও আলাপন থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে গত জুলাইয়ে বৈঠক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। বৈঠকে তিনি ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের চাপে আছি। ধরেন আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইসে যে ডিল করেন। এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না। খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন, সবাই এখানে উপস্থিত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘যদি বলেন, স্যার আপনি যদি না করে দেন তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোনো টাকা—পয়সার লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচা আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে।’
এ সময় ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে এসিল্যান্ড জানতে চান, ‘একজনের দুই একর জমি আছে, তার কাছ থেকে নামজারির ক্ষেত্রে কত টাকা নেবেন? যেহেতু তার জমি বেশি তার কাছ থেকে বেশি টাকা নেবেন এ রকম?’
ওই ইউনিয়ন কর্মকর্তা বলেন, ‘সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।’ এ সময় বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে ৫ হাজার ছিল। আপনি অনুমতি দিলে এখন ৪ হাজার নিতে পারি। আপনি স্যার যেভাবে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেইভাবে করব।’ এরপর এসিল্যান্ড বলেন, ‘ধরেন আমি ৪ হাজার করে নির্ধারণ করে দিলাম। আপনারা কত করে ডিল করবেন। ক্লিয়ার কথা বলেন।’ তখন একজন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘সর্বোচ্চ ৬—এর বেশি আমরা নেব না।’
এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা সঠিকভাবে বলেন, আপনারা কত টাকা করে নিতে চান? আমি আমার দিক থেকে প্রস্তাব করব, আপনারা সাড়ে ৫ হাজার করে নেন। আমার এখানে ৪ হাজার দেবেন। আপনারা দেড় হাজার নেবেন।’
এরপর বৈঠকে উপস্থিত ইউনিয়ন পর্যায়ের সব কর্মকর্তা একমত হন দলিল প্রতি ৬ হাজার টাকা করে নেওয়ার। এ সময় এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার ৬ হাজার টাকা’। তখন এসিল্যান্ড বলেন, ‘৬ হাজার মানে ৬ হাজারই। ৬ হাজার ১০০ টাকা হলে পরবর্তী সময়ে আমি ব্যবস্থা নেব। গত অর্থবছর পর্যন্ত যেগুলো ছিল সেটা এ সপ্তাহের মধ্যে ক্লিয়ার করবেন। প্রতি মাস শেষ হওয়ার পর নতুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হিসাব ক্লোজ করে রবিবারের মধ্যে আমাকে হিসাব বুঝিয়ে দেবেন।’