বিশেষ প্রতিনিধি : লালদীঘির মধ্যে থাকা পৌর হেরিটেজ ভবনের ৬টি পিলার পৌর উদ্যোগে সরানো না হলে বিউটি ফিকেশনের জন্যে বরাদ্দ হওয়া কোটি টাকা ফেরত পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।
শুধু তাই নয় তিনি যশোর পৌরসভার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে যে কয়েকটি জেলায় বসবাসের ফ্লাট করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যশোর পৌরসভার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, এখানে ফ্লাট লাগবে না।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এই চিঠির কারণে বিভিন্ন জনের কাছে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে যে, যশোর কেন সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধার সৃষ্টি করছে? তিনি যশোর পৌর মেয়র হায়দার গণি খান পলাশকে ওই চিঠি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্যে বলেন।
এ সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য জানান, যশোরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসনের জন্যে সরকার ১২০টি ফ্লাট করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রতিটি ফ্লাটের আয়তন হবে ৬৭০ বর্গফুট, সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সবার জন্যে ফ্লাটের ব্যবস্থা হবে এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করবে।
যে কয়টি জেলার জন্যে প্রথম পর্যায়ে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যশোর তার শীর্ষে রয়েছে, অথচ শুধু পৌরসভার অনীহার কারণে আমরা তা হেলায় হারাচ্ছি।
১৮ অক্টোবর যশোর কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে সকালে এ সভা হয়।
সভায় বক্তব্য দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ, ডিডিএলজি মো. রফিকুল হাসান, সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) এস এম শাহীন, যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. আসাদুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক, গণপূর্ত বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মমিনুল ইসলাম, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আরএমও ডা.পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।
সভায় শহরাংশে ভৈরব নদের দূষণ সমস্যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন উন্নয়ন সমন্বয় সভায় অংশগ্রহণকারীরা। বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিউটিফিকেশন করলেও তা কোনো কাজে আসবে না যদি নদের দূষণ বন্ধ না করা যায়, এমন অভিযোগও করেছেন আলোচকরা। দূষণ বন্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা দড়াটানা অংশসহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বার বার চিঠি দেওয়ার পরও দূষণকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এখন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতাও নেই বলে জানানো হয়েছে। ফলে নদের দূষণ বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী জানান, দড়াটানাসহ নদের পাশের হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো বর্জ্য ফেলা বন্ধ না করলে এবং এভাবে যদি নদের দূষণ ও দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনা থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হবে।
সভায় পৌর মেয়র জানান, নওয়াদাগা এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় নদ খনন বা সংস্কারের কোনো চিহ্ন নেই। এ সময় পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মমিনুল ইসলাম ব্রিজ কালভার্ট ছোট থাকা, নদ ভরাট হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে বলেন, যে প্রকল্পের আওতায় খনন হয়েছে সে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে, এখন আর কিছু করার নেই।
তবে সভায় সিদ্ধান্ত হলে রেভিনিউ বাজেট থেকে কিছু সংস্কার করা যেতে পারে। সভায় বক্তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের সমালোচনা করে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর নদের পরিবেশ দূষণ বন্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা ব্যস্ত আছে ইটভাটায় অভিযান চালাতে।
এসব ছাড়া রাজারহাট—মণিরামপুর সড়কের বিভিন্ন বাজারাংশে রাস্তা নষ্ট হওয়া, ঢালাইয়ের কাজ ২০ বছরেও কিছু হয় না সেটা এক বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
সভায় শহরের সার্বিক চিত্র উন্নত করা, সড়কের যানজট কমানো, স্বাস্থ্যকরভাবে পশু জবাই ও মাংস বিক্রিসহ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গৃহীত পদক্ষেপ ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।