নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের ৭টি নদ-নদীতে কম উচ্চতার ১২টি সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করে নদীগুলোকে গলা টিপে হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ বন্ধ করে নদী বাঁচানোর দাবি জানিয়েছে যশোরের ৫টি সংগঠন।
সংগঠনগুলো হলো, ভৈরব নদ সংষ্কার আন্দোলন, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন, চিত্রা নদী বাঁচাও আন্দোলন, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। রোববার সকালে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আন্দোলন কমিটির নেতা ইকবাল কবির জাহিদ, অধ্যাপক ইসরারুল হক, আব্দুর রহিম, শুকুর আলী, মীর ফারুক আহমেদ, শাহিন আহমেদ প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার টেকারঘাট এলাকায় টেকা নদীর ওপর পুরাতন সেতু ভেঙে সেই জায়গায় নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি থেকে এই সেতুর উচ্চতা খুবই কম। একই উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নে মুক্তেশ্বরী নদীর দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কম উচ্চতার দুটি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে সুবলকাঠি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
এখন চলছে সংযোগ সেতু নির্মাণের কাজ। হাজরাইল সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান। দুটি সেতু নির্মাণ করতে মুক্তেশ্বরী নদীতে আড়াআড়িভাবে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। একই উপজেলার নেহালপুর এলাকায় শ্রী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। মণিরামপুর ও চিনাটোলা এলাকায় হরিহর নদের ওপর পুরাতন সেতু ভেঙে কম উচ্চতায় দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
যশোর সদর উপজেলার দাইতলা এবং বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলায় ভৈরব নদের ওপর নির্মিত পুরাতন দুটি সেতু ভেঙে সেই জায়গায় কম উচ্চতার দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা ও সীমাখালীতে চিত্রা নদীর ওপর কম উচ্চতার একটি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। শার্শা উপজেলায় বেতনা নদীর এক কিলোমিটারের দূরত্বের মধ্যে কাজীরবেড়-ইসলামপুর মোড়ে ও শেয়ালঘোনা গাতিপাড়া ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সংযোগস্থলে কম উচ্চতার দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, যশোরের ৭টি নদীতে কম উচ্চতার ১২টি সেতু এতটাই নিচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে, বর্ষাকালে কোনো নৌযান সেগুলোর নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। কোথাও কোথাও শুষ্ক মৌসুমেও নৌযান চলতে পারবে কি না সংশয় রয়েছে। কম উচ্চতার সেতু নির্মাণে নৌ-পথগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে। নদীগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হওয়ার কথা পানির স্তর থেকে গার্ডারের নিচ পর্যন্ত ১৬ ফুট, কোনোটির ২৫ ফুট। কিন্তু নির্মাণাধীন সবগুলো সেতুর উচ্চতা হচ্ছে ৪ দশমিক ৫৯ ফুট থেকে ১১ দশমিক ৫০ ফুট পর্যন্ত।
১০টি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকল্পের আওতায়। সেতু নির্মাণ করতে হলে নৌযান চলাচলের নিশ্চয়তার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সেই ছাড়পত্রও নেয়নি এলজিইডি ও সওজ। বাংলাদেশ নদী কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে এসব সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি। কম উচ্চতার এসব সেতু নির্মাণ বন্ধ করে নদী বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।