সমাজের কথা ডেস্ক : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবার আগে প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এ নাগরিক গড়ার আঁতুড়ঘর হিসেবে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা ঠিক কতটা স্মার্ট নাগরিক তৈরির উপযোগী তা নিয়ে রয়েছে নানান আলোচনা—সমালোচনা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের এখন যারা পাঠদান করাচ্ছেন তাদের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষক প্রায় ৮০ হাজার। কিছু মৌলিক কোর্স ছাড়া তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেননি। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানে চরম বিড়ম্বনায় এসব শিক্ষক। গত কয়েক বছর প্রাথমিকে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের হার বাড়ছে। তবে যে সুযোগ—সুবিধা তারা পান তা তাদের এ পেশায় আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, ১৯৯১ সালের বিধিমালায় নারী প্রার্থীরা এসএসসি পাস ও পুরুষরা এইচএসসি পাস হলেই প্রাথমিকের শিক্ষক হতে পারতেন। সেই সময়ে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নিয়েই এখন বড় বিপত্তি। এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকদের স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যেতে লাগবে আরও ১৪ বছর। এরপর শতভাগ স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষক পাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৪৪টি। কর্মরত শিক্ষক আছেন তিন লাখ ৮৮ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে নারী শিক্ষক দুই লাখ ৫৩ হাজার ৬২৩ জন। পুরুষ শিক্ষক এক লাখ ৩৫ হাজার ২১৫ জন।
স্নাতকধারীর বাইরে তো এখন শিক্ষক খুব কম। যারা আছেন, তারা অন্যদের সঙ্গে আলাপ—আলোচনা করে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর কাজ করছেন। আমরাও প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। হাতে—কলমে তারাও শিখছেন। তবে এটা সত্য যে, শতভাগ উচ্চতর ডিগ্রিধারী পেলে তাদের দিয়ে কাজ বাস্তবায়ন আরও সহজ হবে।
এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকদের নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা। তাদের ভাষ্য, ‘ওই সময়ের বিধিমালা মেনে তাদের চাকরি হয়েছে। তাদের অযোগ্যতা বা অদক্ষতা নিয়ে এখন কথা বলাটা বিধিসম্মত নয়। এতে তারা অপমানিত বোধ করতে পারেন। এখন তাদের স্বাভাবিক অবসরের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’
এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেই ‘খুব সহজে’ একসময় প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়া যেত। যোগ্যতা বলতে দ্বিতীয় বিভাগ থাকলেই চলতো। ১৯৯১ সালের বিধিমালায় ছিল এমন বিধান। ফলে উচ্চশিক্ষিতরা এ পেশায় আসতে চাইতেন না। তবে সরকারি চাকরিতে পরপর দুটি বেতন কাঠামো হওয়ার পর সেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। চাকরির বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়তে থাকে। উচ্চশিক্ষিতরা প্রাথমিকে শিক্ষক হতে ব্যাপকহারে আবেদন করতে শুরু করেন।
পরিস্থিতি বুঝে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন যোগ্যতায় পরিবর্তন আনে সরকার। ২০১৩ সালে বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হয়। এতে পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রির কথা বলা হলেও নারীদের ক্ষেত্রে ছিল ভিন্ন। নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এইচএসসি পাস হলেই চলতো।
সবশেষ ২০১৯ সালের নীতিমালা অনুযায়ী—নারী ও পুরুষ উভয় প্রার্থীর জন্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকার বিধান করা হয়। ফলে সবশেষ কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যারা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের সবারই সর্বনিম্ন যোগ্যতা স্নাতক।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের পরিচালক মনীষ চাকমা বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষক জরুরি। দ্রুত সবকিছু বদলে যাচ্ছে, এর সঙ্গে তাল মেলানোর মতো মানসিকতা থাকা দরকার। এজন্য আমরা উচ্চশিক্ষিতদের এখন প্রাথমিকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাদের হাত ধরেই প্রাথমিক শিক্ষার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।