সমাজের কথা ডেস্ক : কৃষির প্রতি ছোটবেলা থেকেই টান হাবিবুর রহমান জালালের। একসময় জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তবে কয়েক বছর থেকে দেশে এসে কৃষিতেই মজে আছেন। নতুন জাতের ধান চাষেই তাঁর আগ্রহ ও আনন্দ। অন্যরা যেখানে নতুন জাতের ধান চাষ নিয়ে সংশয়ে থাকেন, সেখানে তিনি সানন্দে নতুন জাতের ধান চাষে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।
হাবিবুর রহমানের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগরে। এখন তার সময় কাটে কৃষির নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও নতুন জাত নিয়ে কাজ করে। লাভ—ক্ষতির কথা না ভেবেই গবেষকের মতো তিনি নতুন জাতের ধান চাষ করে পরীক্ষা—নিরীক্ষা করেন।
গিয়াসনগরে গিয়ে ভিন্ন ধরনের ধানখেত চোখে পড়ে। সেখানে টাঙানো সাইনবোর্ডে লেখা ‘কোরিয়ান বেগুনি ধান’। একটি খেতে ‘ইন্দোনেশিয়ান কালো ধান’, একটি খেতে লেখা ‘ফাতেমা ধান—২’ সাইনবোর্ড চোখে পড়ে।
তিনি বলেন, ২০২২ গত বছর থেকে তিনি রঙিন ধান চাষ করছেন। এ জাতের ধান চাষে তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়েছে অনলাইনে দেখে। বীজও সংগ্রহ করেছেন অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাষির কাছ থেকে। গত বছর দেশি—বিদেশি ১২ জাতের ধান চাষ করেছিলেন।
এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও কোরিয়ার ধান ছিল। এই পাঁচ জাতের সব কটি চাল কালো, নয়তো কালোর মতো। সব কটি জাতই ১০ থেকে ১৫ শতক করে জায়গাতে চাষ করেছিলেন।
কোরিয়ান বেগুনি ধানে পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে বলে জানান হাবিবুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, ইন্দোনেশিয়ান জাতেও পোকার আক্রমণ কম। ২০২১ সালে ফাতেমা জাতের ধান থেকে দুটি ছড়া আলাদা করে রেখেছিলেন। সেই ছড়া থেকে বীজ উৎপাদন করেছেন।
গত বছর এই বীজে চাষ করেছেন। ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি ছড়ায় ৮০০ থেকে এক হাজার ধান বা ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম ধান পেয়েছেন। এবার ২০ শতক জমিতে দ্বিতীয়বার চাষ করেছেন। ধানও ১০০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যে পেকে যায়।
গত বছরই তাঁর কাছে এই ধানের বীজ অনেকে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দেননি। তিনি এবার চাষ করে এর ফলন ও সুবিধা—অসুবিধা নিশ্চিত হতে চাইছেন। এবার নির্বিঘ্নে ফসল তুলতে পারলে স্থানীয়দের মধ্যে এই জাতটির বীজ সরবরাহ করবেন।
তাঁর কাজই হচ্ছে অন্যরা যেখানে নতুন জাত নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন, তিনি সে ক্ষেত্রে লাভ—লোকসান নিয়ে ভাবেন না। নতুন কিছু পেলেই চাষ করেন, পরীক্ষা করেন, পর্যবেক্ষণ করেন।