তহীদ মনি : সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৩ সালের জুনে পূর্ণতা পাবে শহরের মণিহার-মুড়লী মহাসড়ক। এক মাসের মধ্যে শুরু হবে ৪ লেন বিশিষ্ট এ সড়কের পিচের কাজ তথা কার্পেটিং। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা এমনটি জানিয়েছেন। প্রায় ৩ কিলোমিটার এ মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ বিগত দুই বছর ধরে চলমান রয়েছে। এজন্য এ সড়কের পথযাত্রীরা ধুলো, ঝাঁকুনিতে অতিষ্ঠ ।
আওয়ামী লীগ সরকার সড়ক মহাসড়কে যে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় যশোর শহরের মনিহার (পুরাতন খুলনা স্ট্যান্ড) থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে। এর আগে বছরের পর বছর রাস্তটি ছিল ভাঙ্গাচোরা, চলাচল করা ছিল দূরহ। প্রতিনিয়ত নষ্ট হতো কর্মঘণ্টা। ২০১৯ সালে এই সড়টির উন্নয়ন প্রকল্প পাস হয়। ‘পালবাড়ি-দড়াটানা-মনিহার-মুড়লি জাতীয় মহাসড়ক (এন৭০৭) এর মনিহার হতে মুড়লি পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় মনিহার থেকে মুড়লি পর্যন্ত কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে। করোনা মহামারিতে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েও কাজ শুরু হয়। রাস্তার দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। অবশেষে আবারও কাজ শুরু হয়। রাস্তার দুপাশ থেকে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, একই পরিমাণ বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তর, বিটিসিএলের ক্যাবল স্থানান্তরসহ নানা প্রক্রিয়ায় কেটে যায় বেশ সময়। এ সময়ে যানবাহন আর যাত্রীদের চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আর সমস্যা সঙ্কুল হয়ে উঠেছে। ধুলোবালির কারনে দায় না ঠেকলে কেউ যেতে চায় না। ।
খুলনার মাহবুব ব্রাদার্স ২ দশমিক ৯১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রাস্তাটি মহাসড়কে রূপান্তরের কাজ পায়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১২৪ কোটি টাকা। ২০২০ এর নভেম্বরে শুরু হওয়া এ কাজের আপাতত ৪৫ শতাংশ শেষ হলেও আগামী বছর জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে সড়ক বিভাগ । প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ জটিল ও সময় সাপেক্ষের ছিল , এখন কাজ শুধু ৩ স্তরের কার্পেটিং করা। এর প্রথম স্তরটি মাস খানেকের মধ্যেই শুরু হবে। এমনটি জানালেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, মূলমহাসড়ক ৪ লেনের। এর সাথে হার্ড সোল্ডার, ডিভাইডার, ভিন্ন গতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্যে আলদা লেন, ড্রেন কাম ফুটপাথ সব মিলিয়ে ৩৬ মিটার প্রশ্স্ত হবে। এর মধ্যে দেড় মিটারের মাটি ফিলিং ডিভাইডারের দুপাশে উভয়পাশে ২৪ ফুট করে চওড়া মূল সড়ক থাকবে। তার দুপাশে ধীরগতির যানের জন্যে থাকবে পৃথক দুটি লেন, এরপর হার্ড সোল্ডারের পাশে থাকবে দেড় মিটার প্রশস্ত ড্রেন। এই ড্রেন ঢাকা থাকবে ৫ ইঞ্চি পুরু স্লাব দিয়ে, ওটাই হবে ফুটপাথ। ২০ বছর মেয়াদী এই মহা সড়কটি মাটি খুড়ে ৫ স্তরের (লেয়ার) কাজ সম্পন্ন্রে মাধ্যমে সড়কে পরিণত হচ্ছে।
মাটির লেভেলিং ও এডিশনাল কাজের পর ১ ফুট পুরু বালির স্তর দেওয়া হয়েছে, খোয়া বালি মিশিয়ে আরও এক ফুট সাব বেইজের কাজ চলেছে, মেইন অংশে ভারী গাড়ির চলাচলের ডিজাইন অনুযায়ী খোয়া-বালির আরও এক ফুট পুরুর সাব বেইজ কাজ(বেইজ-২ টাইপ) হয়েছে। এখন শেষ স্তরের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। পাথর-বালির ১০ ইঞ্চি পুরু বেইজ টাইপ-১ এর প্রথম ধাপটি চলছে। এ কারণে এত দিন ধুলা-বালি আর আবর্জনার মধ্যে দিয়ে যানবাহন আর পথচারীদের চলতে হয়েছে। এখনো হচ্ছে তবে আগের চেয়ে কম এবং ধুলো কমাতে নিয়মিত পানি দেওয়া হচ্ছে রাস্তায়। এ কাজ শেষ হলেই শুরু হবে ৩ স্তর বিশিষ্ট কার্পেটিং বা পিচের কাজ। ২ লেয়ারের বাইন্ডারের ৭৫ মিলিমিটার ও ৭০ মিলিমিটার নিয়ে। এখানে বড় পাথর আর পিচের মিশ্রণ থাকবে। রাস্তার এক এক পাশ আগে শেষ করা হবে তাই এখনো মাসখানেক ধুলার মধ্যেই চলতে হবে। সর্বশেষ ওয়ারিং কোর্সে ২ ইঞ্চি পুরুত্বের ছোট পাথর-পিচের কার্পেটিং শেষ হলে মহাসড়কটি যেমন দৃষ্টি নন্দন হবে তেমনি হবে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মাইল ফলক। বছর বছর যে সড়ক ছিল সবার ভোগান্তীর কারণ সেই সড়টি স্থান পাবে জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদায়। যোগাযোগে আনবে নতুন মাত্রা।
যশোর জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, উন্নয়নের জন্যে সব সময় কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বর্তমান সরকার মনিহার থেকে মুড়লি পর্যন্ত সড়ককে সংস্কার না করে মহাসড়কে রূপান্তর করেছে। ৪ লেনের এ মহাসড়কটি এ এলাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। মহাসড়কে বিভিন্ন স্তরের কাজ করতে গিয়ে শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি, বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিসহ নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এখন সময় আসছে, সেদিন ভুলে যাওয়ার। সরকার শুধু এই মহাসড়ক তৈরিতেই থামবে না, আবার নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে যশোর উন্নয়নে নতুন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।