নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ছাদ ঢালাইয়ের সময় ধসে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে শহরতলীর খোলাডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলাকালে তা ধসে পড়ায় অন্তত ১০জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন শ্রমিকরা। নির্মাণকাজের দুর্বলতা ও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মরত শ্রমিকরা জানান, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) খুলনার আওতায় যশোর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জন্য এ ভবনটি তৈরি করা হচ্ছিল। এর নির্মাণকাজ করছে ঢাকার আইডিয়াল ইলেক্ট্রিক্যাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদের বিম ঢালাইয়ের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ ধসে পড়ে। এতে ১০ জন শ্রমিক আহত হন।
শ্রমিকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন। বাঁশের কাঠামোর উপরে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলায় ওই কাঠামো ভার ধরে রাখতে পারেনি। ফলে তা ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় অন্তত ১০ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হন।
আহত শ্রমিকরা হলেন, যশোর সদরের ঘোড়াগাছা গ্রামের মৃত সন্তোষ আলী মন্ডলের ছেলে হাফিজুর রহমান (৫০), মণিরামপুর উপজেলার পলাশী গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর ছেলে ইমান আলী (৫৫), ঝিকরগাছা উপজেলার মোকছেদ আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৫), যশোর সদরের দত্তপাড়া গ্রামের মইনুল ইসলাম (২৭), যশোর সদরের জিয়াপাড়া গ্রামের আবুল কালাম মোড়লের ছেলে ইলিয়াস আলী (৪৫), যশোর সদরের আমদাবাদ গ্রামের দুলাল সরদারের ছেলে শিমুল হোসেন (২৮), যশোর সদরের চানপাড়া গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে খোকন (৩০), যশোর সদরের মাহিদিয়া গ্রামের মৃত ইমান আলী সরদারের ছেলে আব্দুল হাই সিদ্দিকী (২৮), সদরের আমদাবাদ গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আকিদুল (২৮) ও মণিরামপুর উপজেলার ছবেদ আলী খানের ছেলে জিয়ারুল (৩৫)। পরে স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক মুক্তার গাজী জানান, পরপর তিনটি বাঁশ দিয়ে তিনতলা সমান উচুঁতে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ হচ্ছিল। ঢালাইয়ের মালামাল উপরে ওঠানোর সময় ঝাঁকুনি হয়। এ সময় নিচের বাঁশগুলো সরে যাওয়ায় ভবন ধসে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এই কাজের কোনো নিরাপত্তা ছিল না।
আরেক শ্রমিক আনিসুর রহমান জানান, তিন তলার উচ্চতায় ছাদ হওয়ায় ঢালাই কাজ করার সময় সাটারিং খুলে ছাদ ধসে পড়ে। তারা ৪৫ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাদের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না।
নির্মাণকাজের শ্রমিক সরদার শাহাবুদ্দীন জানান, ছাদের উচ্চতা ৩০ ফুট। কিন্তু নিচে কোনো সেফটির ব্যবস্থা ছিলো না। সরাসরি কেচিং করা। নির্মাণকাজে ত্রুটি থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
যশোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল জুয়েল ইমরান সাংবাদিকদের জানান, গুরুতর আহত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফায়ার সাভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে।
যশোর সেনানিবাস ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার নাহিদ মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান এবং উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। নির্মাণকাজের দুর্বলতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই অবহেলায় বড়ধরণের ক্ষয়ক্ষতিও হতে পারতো।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, ভবনটি ঠিকাদার নির্মাণ করছিল। নির্মাণ শেষ হওয়ার পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। দুর্ঘটনার পর ওজোপাডিকো খুলনা অফিস থেকে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।