১১ই ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ধর্ম শান্তির শিক্ষা দেয় আর সন্ত্রাস দেয় নৈরাজ্যের শিক্ষা
122 বার পঠিত

মাহমুদ আহমদ : প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষা শান্তি আর সম্প্রীতি। সব ধর্মই শান্তির কথা বলে, শান্তির শিক্ষা দেয়। তার পরও সমাজে অশান্তি। ইসলামের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তার নির্দেশ মান্য করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা। আল্লাহতায়ালার ধর্মের মূলতত্ত্ব নিহিত রয়েছে ‘ইসলাম’ শব্দটিতে। তাই ইসলাম বলতে বোঝায় আনুগত্য, বাধ্যতা ও আত্মসমর্পণ। কোরআনের ভাষায় ইসলাম মানে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ।

ধর্ম শান্তির শিক্ষা দেয় আর সন্ত্রাস দেয় নৈরাজ্যের শিক্ষা। ইসলামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই। এমনকি অমুসলিমদের উপাসনালয়েও কোনোরূপ আক্রমণ চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তা—ই নয়, বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সুরা আন আম, আয়াত : ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারিদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি বরং সব জাতি এবং সব সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআন পাঠে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহতায়ালা যখন আদম সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহতায়ালাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছো, যে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আর রক্তপাত ঘটাবে? এর উত্তরে সর্বজ্ঞানী খোদা কেবল এটাই বলেছিলেন, ‘আমি তা জানি, যা তোমরা জানো না’ (সুরা আল বাকারা : ৩০)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মহান আল্লাহ কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা রক্তপাতের কথা অস্বীকার করেননি। সে কথার উল্লেখ না করে তার উত্তরে তিনি কেবল তার মহাজ্ঞানের বিষয়টি আর এ বিষয়ে ফেরেশতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছিলেন।

ধর্ম জগতের ইতিহাসে এক ঝলক ভাষাভাষা দৃষ্টি দিলে বাহ্যত ফেরেশতাদের কথাই ঠিক বলে মনে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, যেখানেই ধর্ম সেখানেই অশান্তি, যেখানেই ধর্ম সেখানেই বিগ্রহ ও নৈরাজ্য। কিন্তু না, একটু মনোযোগ দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখুন। দেখতে পাবেন, এই বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য ধার্মিকদের পক্ষ থেকে নয়, আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষ থেকেও নয়। কিন্তু যারা সমাগত সত্য সুন্দর জ্যোতিকে অস্বীকার করে অন্ধকারের পূজারি হয়ে থাকতে চেয়েছে, যারা তাদের প্রচলিত ধ্যান—ধারণা ও গলিত—মথিত সমাজ দর্শন পরিত্যাগ করতে চায়নি, এসব অরাজকতা ও সন্ত্রাস সব সময় সর্বযুগে তাদের পক্ষ থেকেই পরিচালিত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের ঐশী বাণীটি ভালোভাবে পড়লেই হজরত আদম (আ.) থেকে আরম্ভ করে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ইতিহাসের এই একই ধারার পুনরাবৃত্তি আমরা লক্ষ্য করব। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)—এর পবিত্র জীবনী সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। তিনি সত্য প্রচার ও প্রসারের কারণে সারাজীবন কষ্ট সহ্য করেছেন কিন্তু কারও প্রতি ধর্মের কারণে বলপ্রয়োগ করেননি। বরং তার পক্ষ থেকে পরিচালিত সব আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। সুরা হজের দুটি আয়াত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দান করে।

সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলাম নামের ধর্ম আল্লাহতায়ালা এই পৃথিবীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শান্তির অমিয় বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা বোঝার এবং সে অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলাম লেখক

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram