সমাজের কথা ডেস্ক : চার মাসের দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহর নিয়ে সরাসরি যান গুলশানে নিজ বাসভবন ফিরোজায়।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বিশেষ উপহার রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ভিআইপি টার্মিনালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমানসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতারা।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে খালেদা জিয়া সড়কপথে রওনা হন গুলশানের বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশে। এ সময় সকাল থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী তাকে ও তার দুই পুত্রবধূকে ফুলেল শুভেচ্ছা, স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। তাদের আবেগঘন উপস্থিতিতে পুরো এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের পথে যাত্রা শুরু করলে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীরা স্লোগানে মুখর করে তোলেন গোটা পথ। লাখো জনতার ঢল নামে বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে।
খালেদা জিয়ার এই আগমন ঘিরে নেয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দর এলাকায় গড়ে তোলা হয় চারস্তরের নিরাপত্তা বলয়। একইসঙ্গে গুলশান এলাকাজুড়েও ছিল কঠোর নিরাপত্তা। সকাল ৯টার পর থেকেই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়ক এবং ফিরোজার সামনের এলাকায় বসানো হয় ব্যারিকেড, নিয়ন্ত্রিত করা হয় যান ও জনচলাচল। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। দায়িত্ব পালন করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়, কেবল গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি ছিল অনুমোদিত।
এর আগে, বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৯টার দিকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে দেশের পথে রওনা হন খালেদা জিয়া। কাতারের দোহায় যাত্রবিরতি দিয়ে আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি ঢাকায় পৌঁছান।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফেরেন তার দুই পুত্রবধূ—তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান।
এই সফরের মাধ্যমে প্রায় ১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরেছেন জোবাইদা রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর তিনি উঠবেন ধানমণ্ডির মাহাবুব ভবনে, যা তার পৈত্রিক নিবাস। অন্যদিকে, শর্মিলা রহমান অবস্থান করবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য়।
উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো এই বিশেষ রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়া। পরদিন ৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে টানা ১০ দিন চিকিৎসার পর তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেন।