বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরের শহরাংশে ভৈরব নদের দূষণ সমস্যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি। দূষণ বন্ধ না হলে বিপুল অর্থ ব্যয়ে খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন কোনো কাজে আসবে মনে করছে কমিটি।
গতকাল রোববার সকালে কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর মিলনায়তনে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন, ডিডিএলজি মো. রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ, জেলা পরিষদ সচিব মো. আসাদুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন, গণপূর্ত বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম, সহকারী সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদাত রাসেল, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খাতুন, কেশবপুর পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা পৌর মেয়র আনোয়ার পাশা মোস্তফা জামাল প্রমুখ।
সভায় ভৈরব নদের প্রবাহ না হওয়া, দূষণ বন্ধ না হওয়া, সৌন্দর্যবর্ধন শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। বছরের পর বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার সুফল না পাওয়া হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন কমিটির সদস্যরা। সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নদের দুষণকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু ওইসকল প্রতিষ্ঠান বিষয়টি আমলে না নিয়ে উচ্ছেমত দুষণ ঘটাচ্ছে। ফলে নদের দুষণ বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শেষবারের মতো সতর্ক করার কথা বলেছেন সভার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। তিনি বলেছেন, এতে কাজ না হলে অভিযান পরিচালিত হবে।
এ সময় পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী(চ.দা.) এ.কে. এম মমিনুল ইসলাম জানান, ব্রিজ কালভার্ট ছোট থাকায় নদ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যে প্রকল্পের আওতায় খনন হয়েছে সেটি শেষ হয়েছে, এখন আর কিছু করার নেই। তিনি আরও জানান, দড়াটানা অংশে অনেকগুলো হাসপাতাল-ক্লিনিক নিয়মিতভাবে নদকে দূষিত করছে, এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নদকে দূষিত করছে। তাদের তালিকা করা হয়েছে এবং বার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা দূষণ অব্যাহত রেখেছে। দূষণ অব্যাহত রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়াছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আর কিছু করার নেই বলেও তিনি সভায় জানান। এ সময় তিনি জানান, যদি এ সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতো তাহলে হয়তো দূষণ কমতো।
এ সময় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূর আলম জানান, মোট ১০৬টি প্রতিষ্ঠান দূষণের সাথে জড়িত হলেও মাত্র ২টির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যে তারা ঢাকা অফিসকে জানিয়েছেন। পরে ঢাকা অফিস থেকে সরেজমিন পরিদর্শনের পর হয়তো সেটি মামলায় রূপান্তরিত হবে।
সভার পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা কেনো মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে জানতে চাইলেও বিষয়টির দায়সারাগোছের উত্তর দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা অফিসের অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এ সময় ভৈরব নদের বিষয় ছাড়াও শহরে গরু ছাগল জবাই করার নিরাপদ স্থান কিলখানা না থাকা, যশোর-খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর পর্যন্ত রাস্তার মারাত্মক খারাপ, যশোর চুকনগর সড়কের মণিরামপুর থেকে চুকনগর পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ ত্রুটিসহ বিভিন্ন বিভিন্ন বিষয় সমালোচিত হয়। তাছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা-সমালোচনা হয়।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ জানান, হাসপাতালে ১৯টি ওয়ার্ড ২৪ ঘণ্টার জন্যে ৩টি শিফটে ৫৭জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর প্রয়োজন, এছাড়া আউটডোরের জন্যেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর প্রয়োজন অথচ জনবল কাঠামোতে ৩৬জন থাকার কথা থাকলেও মাত্র ২৭জন কাজ করছে। পৌরসভা থেকে ৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী পাওয়া গেছে। এত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এ সময় জেলা প্রশাসক, মেয়রসহ সভার সদস্যরা জানান ওই জনবল দিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করাতে পারলে অন্তত অভিযোগ উঠবে না। কিছু হলেও পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পাবে।
উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বাজার নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, খাদ্যবিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের সফলতা ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।