নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের আলোচিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারী রমজান শেখ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি রমজানের অস্ত্র ভান্ডার ও মাদক চালান উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ৩২ মামলার আসামি রমজানের ‘ঘাতক পিচ্চি রাজা’র অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারেও পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইতোপূর্বে রমজানের শেল্টারদাতা তার চাচা শিকদারকে নিয়েও এলাকায় রয়েছে নানা আলোচনা—গুঞ্জন।
গত ৮ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের রেলগেট কলাবাগাজ এলাকায় ‘শিষ্য পিচ্চি রাজা’র হাতে গুরু রমজান’ খুন হওয়ার পর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিহত রমজানের পরিবারের দাবি, এলাকার পিচ্চি রাজা ও তার সহযোগীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় ৯ মার্চ সন্ধ্যায় ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন নিহত রমজানের মা রেখা বেগম।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আলোচিত মাদক কারবারী ৩২ মামলার আসামি রেলগেট এলাকার রমজান শেখ (৩০) হত্যাকাণ্ডের পর নিহত রমজান ও ঘাতক পিচ্চি রাজার কব্জায় থাকা অস্ত্র—সস্ত্র ও মাদকের চালান নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। আটক পিচ্চি রাজা ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে দেশি বিদেশি কিছু অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হলেও নিহত রমজানের দখলে থাকা অস্ত্রগুলি ও মাদকের চালান নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সূত্র আরও জানায়, রমজনা হত্যা মামলা দায়েরের পর র্যাব—৬ যশোরের ক্যাম্পের সদস্যরা ১১ মার্চ যশোরের শংকরপুর, বাঘারপাড়া ও শার্শা এলাকা থেকে রমজান হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আলোচিত সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজাসহ ৫ জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে দেশি বিদেশি ৯টি অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।
পিচ্চি রাজা ৯টি অস্ত্রসহ আটক হওয়ার পর থেকে রেলগেট, খড়কি, রায়পাড়া ও রেলস্টেশন এলাকায় এখন রমজানের অস্ত্র ও মাদক নিয়ে আলোচনা চলছে। স্থানীয় সূত্র মতে, গত এক বছর ধরে রেলগেট এলাকার মাদক কারবারে আধিপত্য ছিল রমজান শেখের। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে তার কাছে ইয়াবার চালান আসতো। আর চৌগাছার ছুটিপুরসহ সীমান্ত এলাকা থেকে আসতো ফেনসিডিলের চালান। এছাড়া অন্যান্য মাদকের কারবারও ছিল।
সূত্রের দাবি, রেলগেট এলাকায় প্রতিদিনই কয়েক লাখ টাকার মাদকের কারবার ছিল নিহত রমজানের। রমজানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি চক্র এই মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতো। এই মাদকের কারবারে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দেশি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল রমজান চক্রের। রমজানের এই কারবারে সহযোগী ছিল, রমজানের ছোট ভাই সবুজ, রেলস্টেশন পাড়ার কুরবান, জোসনার ছেলে রকি, একই এলাকার জুয়েল, রুবেল, মুন্না পিচ্চি বাবুসহ অন্তত ১৫ জন।
অভিযোগ রয়েছে, রমজানের নেতৃত্বে এই মাদক—সন্ত্রাসী চক্রের শেলটারদাতা তার চাচা শিকদার। শিকদারের এই পরিচয় প্রকাশ্যে না আসলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান মুকুলের গাড়ি চালক কামাল হত্যা, শহিদ ড্রাইভারের ছেলে রুবেল হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা তপু হত্যাচেষ্টা মামলাও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, রমজানের অস্ত্র ও মাদকের নিয়ন্ত্রণ এখন শিকদার নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি যারা শিকদারের বিরোধিতা বা ঘায়েল করার চেষ্টা করছে তাদের রমজান হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, রমজানের পাশাপাশি পিচ্চি রাজার মাদক চালান ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। পিচ্চি রাজার সাথে বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার হলেও বাকী অস্ত্র ও মাদক তার সহযোগীদের কাছে রয়েছে।
আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের একাধিক টিম রমজান ও পিচ্চি রাজার অস্ত্র—মাদকের চালান উদ্ধারে তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারেও নজরদারি চলছে। পুলিশ এই দুই বাহিনীর অস্ত্র—মাদকের কারবার নিমূর্লে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, রমজান হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত পিচ্চি রাজা সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছে। পাশাপাশি অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকীদেরও গ্রেফতার এবং অস্ত্র—মাদক উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর হত্যার শিকার রমজানের অস্ত্র—মাদক নিয়েও নানা গুঞ্জনের বিষয়টি শুনেছেন। নিহত রমজানের অস্ত্র—মাদকের চালানের ব্যাপারেও তারা অনুসন্ধান করছেন।