১৪ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দীর্ঘ এক যুগেও হলমার্ক গ্রুপের ১১ মামলা নিষ্পত্তি হয়নি

সমাজের কথা ডেস্ক : সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় একযুগ আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ৩৮ মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র চারটির নিষ্পত্তি হয়েছে। অধিকাংশ মামলার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। ছয়টি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক থেকে ওই পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়েছিল। এর মধ্যে বহুল আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ১১টি মামলাও রয়েছে। এর একটিরও বিচার শেষ হয়নি। এই ১১টি মামলাতেই প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি রয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে দুদকের আইনজীবীরা বলছেন, মামলাগুলোয় আসামি ও সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং একই আদালতে অন্যান্য মামলার বিচার কার্যক্রম চলায় বিচার এগোচ্ছে না। এ ছাড়া সাক্ষী তলব করলেও সময়মতো হাজির না হওয়া, এমনকি সাক্ষী উপস্থিত হলেও কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাও দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দুই মামলায় গত ১০ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই দিন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়নি। যে কারণে সেদিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, প্রিজন ভ্যান ও পুলিশ দল না পাওয়ায় আসামিদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।

২০১০—২০১২ সালের মার্চের মধ্যে সোনালী ব্যাংকসহ দেশি—বিদেশি ৪১টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে হলমার্ক ৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা তুলে নেয়। এর মধ্যে জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপর ৫৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আদায় হয়। হলমার্ক গ্রুপের মালিক তানভীর মাহমুদ গ্রেপ্তারের পর গত একযুগে আর কোনো অর্থ আদায় হয়নি।

এদিকে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের শর্তে ২০১৩ সালের আগস্টে জামিন পেয়েছিলেন মামলার অন্যতম আসামি হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। কিন্তু তিনি ছয় বছর জামিনে বাইরে থাকলেও এক টাকাও পরিশোধ না করায় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই তার জামিন বাতিল করে ফের কারাগারে পাঠান আদালত। বন্ধক রাখা সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে বিক্রির অনুমতি পেলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র। বর্তমান বাজারদরে বিক্রি হলেও সোনালী ব্যাংক তা থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার কোটি টাকা পেতে পারে। ফলে ২ হাজার কোটি টাকার কোনো হিসাব মিলছে না ব্যাংকটির।

এসব ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত ও সাধারণ আদালতে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শেষে পৃথক ৪০টি মামলা করে। এর মধ্যে ফান্ডেড ৩৮টি, আর নন—ফান্ডেড দুটি মামলা দায়ের করা হয়। হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১২ সালে ফান্ডেড (সোনালী ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ) ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৭ জনকে আসামি করে ১১টি মামলা এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্স ও প্যারাগন গ্রুপসহ পাঁচটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ফান্ডেড মামলায় ৩৭২ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা লোপাটের অভিযোগে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আরও ২৭টি মামলা করে দুদক।

২০১২ ও ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে ৩৫টি মামলায় চার্জশিট এবং ৩টি মামলায় এফআরটি দেয় সংস্থাটি। চার্জশিট হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ১১টি মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। অন্য মামলাগুলোতে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ব্যাংকটির তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের এবং হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

হলমার্কের ১১টি মামলায় আসামি ২৫ জন। যাদের মধ্যে তানভীর মাহমুদ, তুষার আহমেদ, সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিজিএম সফিজউদ্দিন আহমেদ, ডিএমডি মাইনুল হক (বর্তমানে ওএসডি) ও এজিএম. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া জামিনে রয়েছেন ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার।

হলমার্কের মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের মালিক আব্দুল বাছির, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মালিক জিয়াউর রহমান, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আবদুল মালেক, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম ননী গোপাল নাথ (বর্তমানে ওএসডি), প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, এজিএম এজাজ আহম্মেদ, সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি।

দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘হুমায়ুন কবিরসহ ব্যাংকের ৮/১০ জন কর্মকর্তা এখনো গ্রেপ্তার হননি। শুনেছি, হুমায়ুন কবির দেশের বাইরে চলে গেছেন।’ তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রসিকিউশন কি করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওয়ারেন্ট তামিল করা যেতে পারে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram