২৫শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা
দিশার বিরুদ্ধে দু’কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : উপ—আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র আওতায় যশোরে সেকেন্ড চান্স এডুকেশন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘হরিলুটের’ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যশোরে সরকারি এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও ‘দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ কাগজপত্র জাল—জালিয়াতি করে অন্তত দুই কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঝরে পড়া শিশুদের জন্য এ প্রকল্পের স্কুলগুলোর বাড়িমালিকরা ভাড়া পাননি; বেতন বকেয়া রয়েছে শিক্ষক, সুপারভাইজারদের। শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে নিম্নমানের পোশাক, ব্যাগ। এভাবে অনিয়ম—দুর্নীতি করে ওই টাকা লুটে নিয়েছে ‘দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’।

অভিযোগকারীদের দাবি, ‘দিশার অফিস জালিয়াতির কারখানা। প্রকল্পের যাবতীয় বিল—ভাউচার তাদের নিজেদের তৈরি করা। এমনকি প্রকল্পের আয়—ব্যয়ের যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেয়া হয়েছে; সেটিও নিজেরা তৈরি করেছে। ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করলেই তা ধরা পড়ে যাবে।’

এসব বিষয় তুলে ধরে প্রকল্পেরই উপজেলা ম্যানেজার উপ—আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র মহাপরিচালক বরারবর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র সহকারী পরিচালককে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোটা দেশের ঝরেপড়া শিশু কিশোরদের শিক্ষার আওতায় আনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর উপ—আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র আওতায় ২০২০ সালে সেকেন্ড চান্স এডুকেশন (সাব—কম্পোনেন্ট ২.৫’ আউট অব স্কুল চিল্ডে্রন—(ওওএসসি) প্রোগ্রাম, পিইডিপি—৪) কর্মসূচি গ্রহণ করে।

<< আরও পড়তে পারেন >> যবিপ্রবি : কোটি টাকার অডিট আপত্তি

কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক জেলা থেকে একটি লিড এনজিও নির্বাচন করা হয়। যশোরে লিড এনজিও হিসেবে ‘দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ ৬টি উপজেলা ও যশোর পৌরসভায় (দু’টি এরিয়ায় বিভক্ত করে ১ ও ২) প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম—দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগকারীদের দাবি, কার্যক্রম শুরুর পূর্বে ঝরে পড়া শিশুর তথ্য সংগ্রহে জরিপকারীদের ৮০ ভাগ টাকা এখনো পাওনা রয়েছে। শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগে ব্যাপক অর্থবাণিজ্য করা হয়েছে।

গত ৩০ জুন’২৩ প্রকল্প শেষ হলেও শিক্ষক, সুপারভাইজারদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলের জন্য ভাড়া নেওয়া ঘরের ভাড়া পাননি বাড়ি মালিকরা।

সূত্র জানায়, যশোরের ৬টি উপজেলার প্রায় চারশ’ স্কুলকেন্দ্রের এক বছরের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। দেড় হাজার টাকা হিসেবে এই চারশ’ স্কুলের এক বছরের ভাড়া ৭২ লাখ টাকা।

আর যশোর পৌরসভার ৬০টি কেন্দ্রে আড়াই হাজার টাকা করে দেড় বছরের ভাড়া দেওয়া হয়নি। এই ভাড়ার পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা। অথচ এই কোটি টাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও উত্তোলন করে নিয়েছে।

এছাড়াও যশোর পৌরসভার ৬০টি স্কুল কেন্দ্রের ৬০ শিক্ষকের ১০ হাজার টাকা করে দু’মাসের বেতন বাবদ ১২ লাখ টাকা, ছয় উপজেলার ৪০০ জন শিক্ষকের ৫ হাজার টাকা করে দুই মাসের ৪০ লাখ টাকা, উপজেলার ৫০ জন সুপারভাইজারের ১৫ হাজার টাকা করে দুই মাসের বেতন ১৫ লাখ টাকা, পৌরসভার ৬জন সুপারভাইজার ও উপজেলার ৮ জন ম্যানেজারের ২০ হাজার টাকা করে দুই মাসের ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা উত্তোলন করে হজম করে নিয়েছে বলে অভিযোগ।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে এই উপ—আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য ঘরভাড়া নেওয়া হয় ওই গ্রামের মোসলেম বিশ্বাসের। তিনি বলেন, স্কুলঘর ভাড়া নেওয়ার পর থেকে তিনি একদিনের ভাড়াও পাননি।

ওই কেন্দ্রের শিক্ষক মোসলেম বিশ্বাসের পুত্রবধূ মোছা. জুইনা খাতুন বলেন, কেন্দ্রে প্রথম যে শিক্ষক ছিলেন, বেতন না পেয়ে তিনি ৪/৫ মাস পর চলে যান। এরপর তিনি কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। তিনিও পাঁচমাস পড়িয়ে কোনো বেতন পাননি।

একই উপজেলার ধর্মগাতি কেন্দ্রটি ওই গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়িতে। জহুরুল ইসলামের ছেলে মাজহারুল ইসলাম জানান, তারাও কেন্দ্রের কোনো ভাড়া পাননি। তার স্ত্রী ঝরণা খাতুন ওই কেন্দ্রের শিক্ষিকা। তিনিও কোনো বেতন—ভাতা পাননি।

বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের কেন্দ্রের শিক্ষক জেসমিন খাতুন জানান, তার আট মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আর কেন্দ্রের বাড়িমালিক নাজিম মেম্বর কোনো ভাড়া পাননি।

জহুরপুর ইউনিয়নের বেতালপাড়া কেন্দ্রের বাড়ি মালিক মোক্তার হোসেনও কোনো ভাড়া পাননি।

এই ইউনিয়নের সুপারভাইজার আব্দুর রহিম জানান, কোনো কেন্দ্রের বাড়ি মালিক ভাড়া পাননি। কিন্তু দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। তার নিজের বেতন এবং স্যোশাল বেনিফিটের টাকাও বকেয়া রয়েছে।

প্রকল্পের উপজেলা ম্যানেজার মো. আব্দুল্লাহ জানান, তার দুই মাসের বেতন এবং এক বছরের টিএ বিল পাওনা রয়েছে। তিনি শুধু একা নন, এভাবে প্রত্যেক শিক্ষক, সুপারভাইজার, ম্যানেজারের বেতন বকেয়া রয়েছে। ভাড়া পাননি বাড়ির মালিকরা।

কিন্তু কাগজপত্র জাল—জালিয়াতি করে দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা ওইসব টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে নিম্নমানের পোশাক, ব্যাগ দিয়ে বরাদ্দের টাকা লুটপাট করেছে।

মো. আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, ‘দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার অফিস জালিয়াতির কারখানা। প্রকল্পের যাবতীয় বিল—ভাউচার তাদের নিজেদের তৈরি করা। শিক্ষক, বাড়ি মালিকদের স্বাক্ষর নিজেরা করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।

এমনকি প্রকল্পের আয়—ব্যয়ের যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেয়া হয়েছে; সেটিও দিশা’র কর্মকর্তারা নিজেরা তৈরি করেছে। ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করলেই তা ধরা পড়ে যাবে। এইসব জাল কাগজপত্রের প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে।

এজন্য তিনি উপ—আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র সহকারী পরিচালককে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাহিমা সুলতানা বলেন, জাল—জালিয়াতি বা অনিয়ম দুর্নীতির সব অভিযোগ মিথ্যা। যারা এই প্রকল্পে কাজ করতে পারেনি তারা এ ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রকল্পের আয়—ব্যয়ের যাবতীয় হিসাব তাদের কাছে রয়েছে।

যশোর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’ তাকে পত্র দিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলেছে। চাহিদা অনুযায়ী তিনি কাগজপত্র ও প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram