বিশেষ প্রতিনিধি : যশোর শহর ও এর আশপাশে আগুন নেভানোর উপযোগী জলাধার নেই। দুর্ঘটনাবসত আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে ফায়ার সার্ভিসকে। তাই আগুনের ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলায় বড় বাজারে দুটি তিনটি আন্ডার গ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়াও ব্যবসায়িক ও জনসমাগম এলাকায় পানির রিজার্ভ বাড়ানো, শহরের পুকুরগুলোকে সচল রাখা, ভৈরব নদের পানি প্রবাহের বাধা দূর করে পানি সঞ্চিতির উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন।
গতকাল রোববার সকালে যশোর জেলার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার মূল্য আলোচ্য বিষয় ছিল যশোরের অগ্নিঝুঁকি ও প্রস্তুতি। জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান সভায় সভাপিতত্বে সভায় জানানো হয় ঢাকার অগ্নিকান্ডের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানলয়ের অগ্নিসুরক্ষা বিভাগ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনার আলোকে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বাইরে থাকা মার্কেট ও ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। একই সাথে শহরের সকল বাণিজ্যিক এলাকায় অগ্নি নিরাপত্তা জোরদার, অগ্নি প্রতিরোধ যন্ত্রপাতির পরীক্ষা ও স্থাপন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরীক্ষাকরণের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সভায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরে এক সপ্তাহ ধরেই তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপদাহের মধ্যে অল্পতেই যেকোন স্থানে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। যশোরের অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো চিহ্নত করা ও সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যশোরের দিন দিন জলাশয় কমে যাচ্ছে। শহরের পুকুরগুলো বন্ধ করা হচ্ছে, জলাধার ধ্বংস হচ্ছে। জেলা প্রশাসক অগ্নিকা-ের সময় সবচেয়ে জরুরি এই পানির উৎস রক্ষায় জলাশয় রক্ষা করতে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
যশোরে মার্কেটগুলোতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে বড়ধরণের ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর ফায়ার ও ডিফেন্স সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ। সভায় অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্যে মার্কেটগুলোতে জরুরি নিজস্ব ব্যবস্থায় পানির ব্যবস্থা রাখাসহ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।সম্প্রতি যশোরের চুড়ামনকাটিতে একটি পেপসি কোম্পনির ডিপোতে অগ্নিকা-ের পানির সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরে মামুনুর রশিদ জানান, পানি নিতে দূরের ক্যান্টমেন্টের পুকুর ব্যবহার করতে হয়।
তিনি নিজ নিজ এলাকায় পানির উৎস জলাশয় ও পুকুর অকারণে ভরাট করা থেকে বন্ধ থাকার অনুরোধ করেন। একই সাথে যশোর শহরের বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও অনুরোধ করেন। তিনি জানান, বড় বাজারে দুটি তিনটি আন্ডার গ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার দরকার। এই আলোচনায় প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, শহরের প্রাণ কেন্দ্রের লালদীঘিটি জলাধার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধান ও প্রতিনিধিরা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণসহ সংশ্লিষ্টরা।এ সময় ভৈরব নদে পানির লেয়ার বৃদ্ধি এবং পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়। এতে করে আগামী বৃষ্টি মৌসুমে অন্তত পানির উচ্চতা বাড়বে এবং পানির সঞ্চয় বাড়বে।
সারা দেশে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ক্ষয়ক্ষতি, এর থেকে সতর্কতা থাকা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং গত কয়েকদিন ধরে প্রচ- দাবদাহের ফলে অতিষ্ট জনজীবনে সতর্কতা বিষয়ে আলোচনা হয়। অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে না যাওয়া, ঘন ঘন পানি পান করা, রোজাদারদের ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সময় জানানো হয় অতিরিক্ত খরা, গরম ও শুষ্কতার কারণে বেশিরভাগ টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না, পানির স্তর ৩৫ ফুটেরও গভীরে নেমে গেছে তাই স্বভাবতই জনজীবনে এর প্রভাব পড়েছে। সকলকে এ সময় ধৈর্যের সাথে সতর্কতা অবলম্বেনের অনুরোধ করা হয়।
সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক নির্বিঘেœ বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় আগত পবিত্র ঈদুল ফিতরে সড়ক চলাচল নির্বিঘœ রাখতে পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের যথাযথ দায়িত্ব পালন, প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করার ওপর গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে ঈদে সড়কে যোগাযোগে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত ভিড় সৃষ্টি করতে না পারে, মনিহার, খাজুরা স্ট্যান্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অযথা বাস-ট্রাক দাঁড়িয়ে না থাকতে পারে বা রাস্তার দুপাশে অবৈধ দখল না থাকে সে সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন সভাপতি। এ সময় ঈদে অতিরিক্ত গতিতে মোটর সাইকেল চলাচল করে দুর্ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও অভিযানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়।
সড়ক সংস্কারে চলমান কাজও দ্রুত শেষ করে ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করার কথা বলা হয়। ঈদ বা উৎসব উপলক্ষে অনেক সময় মাত্রারিক্ত মাদকের ছড়াছড়ি হয়, অতীতে এ সব কারণেও প্রাণহানি হয়েছে এটা যাতে আর ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হওয়া ও তদারকি করার বিষয়ে নির্দেশ দেন। এ সময় জানানো হয়, নানা কারণে গত কয়েক বছর ঈদের সময় খুনোখুনি বা হত্যাকা-ের ঘটনা ঈদের আবহাওয়াকে বিষাদে পরিণত করেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ সময় জোরদার ভূমিকা পালন ও প্রতিরোধে করণীয় দিকের ওপর জোর দিতে বলা হয়।