মনিরুজ্জামান মনির : রোজার শুরুতেই ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জি পাড়ায়। সেলাই মেশিনগুলো চলছে অবিরাম। যশোরে টেইলাসগুলোতে থরে থরে সাজানো তৈরি পোশাক। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে সেলাই মেশিন। মাস্টার ব্যস্ত কাপড় কাটতে। বেশিরভাগ দোকানে টাঙ্গানোর হয়েছে ‘অর্ডার বন্ধ’ নোটিশ।
যশোরের এইচ এমএম রোড ও কালেকটরেট মসজিদ কমপ্লেক্স মার্কেট ঘিরেই জমজমাট টেইলার্স ব্যবসা। এরবাইরে শহরের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে টেইলার্স। শহরের মধ্যে কিংবা পাড়া মহল্লায় সব টেইলার্সেই এখন ঈদের ব্যস্ততা চলছে। তবে টেইলাস মালিকরা বলছে ঈদের ব্যস্ততা থাকলেও অর্ডার তুলনামূলক কম।
রাজারহাট থেকে এইচএমএম রোডে কেনাকাটা করতে আসা নাসিম হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে স্ত্রীর জন্য একটা থ্রিপিস তৈরি করতে আসেছি। দেরি হয়ে গেছে এজন্য টেইলার্সে জোর করেই অর্ডার দিলাম। ঈদের দুদিন আগে ছাড়া ডেলিভারী দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। তবে ঈদের বাজারে সব কাপড়ের দাম বেশি। কাপড় কিনতে হচ্ছে বেশি দামে আবার বানাতেও হচ্ছে বেশি দামে।
কারবালা এলাকা থেকে কেনাকাটা করতে আসা সুমি খাতুন জানান, ‘কামিজ তৈরি করতে আসছি। ভাই ঈদে নতুন কাপড় কেনাকাটা করবো কি করে এবং কাপড় তৈরি করবো কি করে দাম অনেক বেশি। গত বছর যে থ্রি পিস ৮’শ থেকে ১২’শ টাকা ছিলো সে থ্রি পিস এবছর ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা। সবারই তো ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকে। সব কিছুরই দাম দ্বিগুণ। কিন্তু চাকরি এবং কর্মচারীর বেতন তো দ্বিগুণ হয়নি। বাঁচ্চার জন্যও কাপড় বানাতে আসছি। ঈদে আত্মীয়-স্বজনের জন্য কেনাকাটার ইচ্ছা আছে। কিন্তু যে পরিমাণ দাম, শেষ পর্যন্ত পেরে দেবো কিনা বলতে পারছি না।’
ঘোপ নওয়পাড়া রোডের গরিবশাহ টেইলার্সের জামান হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে কাজ বেড়েছে। কিন্তু গতবছরের তুলনায় খুবই কম। এ বছর তেমন কোন চাপ নেই। কারণ সব জিনিসের দাম এ বছর খুব বেশি।
কালেকটরেট মসজিদ কমপ্লেক্স ছিটকাপড় মার্কেটের আল-আমিন টেইলার্সের কামরুজ্জামান জানান, যে ভিড়টা দেখছেন সেটা শবে বরাতের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এখন আর ঈদের নেয়া হচ্ছে না, অর্ডার নিলে শেষ করা সম্ভব হবে না ।
ইউনুস টেইলার্সের মালিক ইউনুস আলী জানান, আমি পাঞ্জাবি-পায়জামায় বেশি তৈরি করি। পাঞ্জাবির অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। মোটামুটি ভালই চাপ আছে।
যশোর বারি চেম্বার মার্কেটের নকশী কুঠি টেইলার্সের সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘এ বছর কাজের অর্ডার ঈদের দিন পর্যন্তই নেওয়া লাগবে। কারণ কাপড়ের দাম বেশি এবং মজুরির দামও বেশি। যার কারণে মানুষের বানানোর চাহিদাও কম। তবে পাঞ্জাবি এবং থ্রি পিস’র কাজ অনেক বেশি। প্যান্ট শার্টের কাজ নেই বললেই চলে। গত বছর ২০ রমজানেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর কাপড়ের দাম বেশি এবং টেইলার্স কর্মীদের আন্দোলনের কারণে কাজ কমে গেছে। এখনো কাপড়ের মজুরির বাড়াইনি। কিন্তু আন্দোলনের কারণে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। তবে ঈদের পরে দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।’
আল্পনা টেইলার্সের আনিসুর রহমান জানান, আমার দোকানে ৩/৪ জন কর্মচারী কাজ করে। কিন্তু এ বছর কাজ কম হওয়ার কারণে কর্মচারী কমিয়ে দিয়েছি। ঈদ উপলক্ষে চাপ বেড়েছে পাঞ্জামি-পায়জামা এবং থ্রিপিসের। তবে গত বছরের তুলনায় কাজ অনেক কম। আগে যারা ২ সেট কাপড় তৈরি করতো তারা ১ সেট করে তৈরি করছে। এতে আমাদের চাপ কমে যাচ্ছে।