সমাজের কথা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে শীতকালীন তীব্র ঝড়, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও তুষারঝড়ে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে টানা শীতকালীন ঝড়ে অনেক এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই তীব্র ঠাণ্ডা গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে এবং এ সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কানাডার মধ্যপশ্চিমাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আসছে হীমশীতল এই ঠাণ্ডা বাতাস। এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগই আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিস্থিতি যেমন, বরফের রাস্তার কারণে গাড়ি দুর্ঘটনা এবং কাছাকাছি হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রবল তুষারপাত ও রাস্তায় বরফের স্তূপ জমার কারণে যানবাহন উল্টে যাওয়া এবং দুর্ঘটনাসহ মহাসড়কগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে শীতকালীন ঝড় শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত এবং প্রায় ৩ হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। আরও ফ্লাইট বিলম্ব এবং বাতিল হতে পারে বলছে ফ্লাইট—ট্র্যাকিং পরিষেবা ফ্লাইটএ্যাওয়ার। পাওয়ারআউটেজ.ইউএস ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রায় ১ লাখ বাসিন্দা এখনো বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
শীতকালীন এমন বিরূপ আবহাওয়ায় শুধুমাত্র টিনাসে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এক যুবক। যাকে একটি অস্থায়ী বাড়ির মেঝেতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার বাড়ির স্পেস হিটারটি উল্টে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যু হয় তার।
তীব্র ঠাণ্ডার কারণে মেম্ফিসের পানির অনেক পাইপ ভেঙে গেছে। যার কারণে সেখানে পানির চাপ পড়েছে। শুক্রবার লাইট, গ্যাস ও পানি কর্তৃপক্ষ তাদের ৪ লাখ গ্রাহকের সবাইকে পানি ফুটিয়ে পান করার আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি দাঁত ব্রাশের জন্যেও ফোটানো পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে তারা। যদি পানি ফোটানো সম্ভব না হয় তাহলে বোতলজাত পানি ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব জনজীবনে এতটাই বেশি পড়েছে যে, এখন মানুষ রক্তদান করতেও যাচ্ছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস) বলেছে, ভারী তুষারপাত ও হিমশীতল বৃষ্টি প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর—পশ্চিমের বেশিরভাগ অংশকে ঢেকে দিয়েছে। ফলে তুষার ঝড়ের পাশাপাশি আরও তীব্র শীতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে সতর্কতা জারি করেছে এনডব্লিউএস। ৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ শীতকালীন আবহাওয়ার সতর্কতার আওতায় রয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে স্কুল—কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিয়ে দেওয়া হয়েছে অফিসের সময়।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আবহাওয়াবিদরা নিউইয়র্ক সিটিতে যে পরিমাণ তুষারপাতের ধারণা করেছিলেন, সেখানে শুক্রবার তার চেয়েও বেশি তুষারপাত হয়েছে। অপরদিকে তীব্র শীতকালীন ঝড় আঘাত হেনেছে প্রশান্ত উত্তর—পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যপশ্চিমাঞ্চল, সমভূমি, দক্ষিণ ও উত্তর—পশ্চিমাঞ্চলে। এর সঙ্গে সেখানে যোগ হয়েছে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড তুষারপাত, বরফ ঝড়, ফ্রিজিং রেইন এবং তীব্র বাতাস। যা গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে।