নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনা বিভাগজুড়ে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভঙ্গ করে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সোমবার এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিন যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, দেশে চলমান তাপদাহের কারণে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল বন্ধ থাকবে। আর চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং মাদ্রাসায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যšত্ম পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। ভাঙছে আগের সব রেকর্ড। গতকাল ১১ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) প্রায় ১৭ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে উঠে গেছে। একইভাবে ঢাকার তাপমাত্রা আবারও ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। তবে সুখবর হচ্ছে, ২ বা ৩ মে সিলেটে ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপমাত্রা কিছু সময়ের জন্য কমে আসবে বলে আশা করছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে, দেশে চলমান তাপদাহের কারণে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ৫ জেলা, রংপুর বিভাগের দুই জেলা ও বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধের ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে চলমান তাপদাহের কারণে আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে পরামর্শ করে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলার এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামীকাল ৩০ এপ্রিল বন্ধ থাকবে।
তবে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং মাদ্রাসায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে সোমবার এ আদেশ দেয়।
ঈদের ছুটির পর গরমের কারণে এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে রোববার থেকে খুলেছে স্কুল ও কলেজ। দেশজুড়ে তাপপ্রবাহের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় গরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসছে। গরমের মধ্যে হিট স্ট্রোকে বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন।
চলমান তাপপ্রবাহে ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সোমবার আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনির উদ্দিন।
আদেশের পর তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সামিউল আলম সরকার।
সামিউল আলম সরকার বলেন, “শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি নেই, তীব্র গরমের কারণে এ ধরনের প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন ধার্য থাকলে নির্ধারিত সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগেরদিন ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ২। এছাড়া ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা থাকা অঞ্চলগুলো হচ্ছে— ঈশ্বরদী, যশোর, রাজশাহী, বাঘাবাড়ি, কয়রা, ফরিদপুর, মোংলা, খুলনা, টাঙ্গাইল, কুমারখালী, বদলগাছি, বগুড়া, আরিচা, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা। এ হিসেবে দেশের প্রায় ১৭ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে অবস্থান করছে। এর আগে এদিন ১১ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে।
গত বছরের এই সময়ে এত অঞ্চলের তাপমাত্রা একসঙ্গে ৪০ ডিগ্রির ওপরে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা। তিনি বলেন, এত বেশি তাপমাত্রা এতদিন ধরে এত বেশি এলাকায় এর আগে কখনও থাকেনি। এটা গত বছরের তুলনায় অবশ্যই বেশি। তিনি আরও বলেন, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়দিন ধরেই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। ২ বা ৩ মে’র দিকে সিলেট ছাড়াও ঢাকা বিভাগসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, যশোর ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে, খুলনায় তাপমাত্রা ২৪ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ বছর আগে খুলনায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুধু খুলনা জেলা নয় দাবদাহে পুড়ছে পুরো খুলনা বিভাগ। যথারীতি বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ বছরের মধ্যে আজ খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট ও গাছপালা কেটে স্থাপনা গড়ে তোলাই গরম বেড়ে যাওয়ার কারণ। এছাড়া লবণাক্ততা বেড়ে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি।’
এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং কয়রায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত ১৩ থেকে থেকে জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এতে বিপাকে পড়েছে মানুষ। অসহ্য গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। বৃষ্টির দেখা নেই। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক স্থানে নলকূপ ও পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না।