সমাজের কথা ডেস্ক : কিছু দিন আগের চিত্র—ডাকঘরে চিঠি প্রেরকদের দীর্ঘ সারি, পোস্ট কার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক লোকেদের তাড়া, মানি—অর্ডার ফরম পূরণের জন্য এর—ওর কাছে ঘোরাঘুরি করা সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির উপস্থিতি। তবে প্রযুক্তির দাপটে এমন চিত্র এখন একেবারেই অপরিচিত।
আজ বিশ্ব ডাক দিবস (৯ অক্টোবর)। বিশ্ব ডাক দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আস্থায় একসঙ্গে: নিরাপদ ও অভিন্ন ভবিষ্যত গড়তে সহযোগিতা।’ বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি উদযাপিত হচ্ছে, তবে একেবারে দায়সারাভাবে।
একজন পোস্ট মাস্টার জানালেন, বর্তমান দিনে এই ডাকঘরে বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানোর জন্য যত চিঠি আসে তার ৯০ শতাংশই অফিসিয়াল, আর ১০ শতাংশ ব্যক্তিগত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানি—অর্ডারের সংখ্যাও এখন খুবই কম। যারা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন না, তারাই আসেন। তবে পার্সেল সার্ভিসের চাহিদা বেশ ভালোই আছে। নিজ থেকেই তিনি বললেন, ‘রেভিনিউ স্ট্যাম্পের বিক্রি বেশি হয়।
মোহাম্মদ এহসান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, তিনি পোস্ট অফিসে সঞ্চয় করতেন। সম্প্রতি হিসাব বন্ধ করেছেন, এসেছিলেন চেক নিতে। বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তিনি শুধু বললেন, ‘অনেকদিন তো টাকা জমালাম।’
প্রসঙ্গত, ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্নে ২২ দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক পোস্টাল ইউনিয়ন। দিনটি স্মরণীয় হিসেবে রাখতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ১৯৬৯ সালে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ অর্জন করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে দেশে প্রতিবছর বিশ্ব ডাক দিবস পালিত হয়ে আসছে।
ইতিহাস বলছে, ১৮৪০ সালে প্রথম ডাকটিকিট ব্যবহার হয় ব্রিটেনে। এর একযুগ পরে ১৮৫২ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ডাকটিকিটের প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই ভারতীয় নাগরিক বিমান মল্লিকের ডিজাইন করা আটটি ডাকটিকিট কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। কূটনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে স্বাধীনতার সপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে মুজিবনগর সরকার।
দেশে ডাকঘরের সংখ্যা কত তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। শোনা যায়, এই সংখ্যা ৯ হাজার। আবার কেউ কেউ দাবি করেন, এই সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজার। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমি ধরে নিই, এই সংখ্যা ৯ হাজার। কারণ, ডাকঘরগুলোর মধ্যে কিছু সচল আছে, আবার কিছু সংস্কার করা হচ্ছে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘দেশের ডাকঘরগুলোকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব থেকে ৪—৫ কোটি টাকা খরচ করে একটি সার্ভে করা হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে আমরা সেই রিপোর্ট পেয়ে যাবো। ডিজিটাল যুগের উপযোগী ডাক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ডাকঘর ডিজিটাইজেশনের পথ নকশা (রোডম্যাপ) তৈরি করছি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেওয়া হবে। আগামী ৫ বছরে দেশের সব ডাকঘরকে ডিজিটাল করা হবে।’
নতুন করে ১৪টি শর্টিং সেন্টার নির্মাণ ও ডিজিটাইজ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, একই সঙ্গে রেলে চিলিং বগি ও ডাকের অন্যান্য গাড়িতে চিলিং ভ্যান চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মেইলিং সেন্টার তৈরি, নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে।