২৮শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তামিম ইকবাল
জীবনের ইনিংসে কঠিন লড়াইয়ে তামিম

ক্রীড়া ডেস্ক : ছোট্ট একটা ভিডিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে নিথর পড়ে আছেন তামিম ইকবাল। তাকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। তাতে প্রাথমিক বিপদ কেটে গেছে, তবে এখনও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকছেন তিনি।

অন্য যে কোনো দিনের মতোই শুরু হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের তিন ম্যাচ। স্বাভাবিক সময়ের মতোই টস করেন তামিম। এরপরই বদলে গেল সব কিছু। হঠাৎই বুক ব্যথার কথা বলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব অধিনায়ক। উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের মধ্যে কাটে পরের সময়টা।

বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে সোমবার শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের মুখোমুখি হয় মোহামেডান। নির্ধারিত সময়েই টস করেন তামিম। এরপর ড্রেসিং রুমে ফিরে তীব্র বুক ব্যথার কথা বলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক।

ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালের অনুমতি নিয়ে তামিমকে সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে নিয়ে যায় মোহামেডান কর্তৃপক্ষ। ইসিজি ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিলে তামিমকে হাসপাতালে থাকতে বলেন চিকিৎসকরা। দেবব্রত পাল জানান, তামিম তখন নিজ থেকেই মোহামেডান কর্মকর্তাদের ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকেএসপির মাঠে আনা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।

হাসপাতাল থেকে বিকেএসপিতে ফিরলেও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে পারেননি তামিম। বরং তখনই আরেক দফায় বাড়ে বুকের ব্যথা। পরে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরি বলেন, ওই সময়ই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করেন তামিম।

তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় বাঁহাতি ওপেনারকে খুব দ্রুত আবারও কেপিজে হাসপাতালে আনা হয়। পুরোটা পথ তাকে ‘সিপিআর’ দিতে থাকেন মোহামেডানের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরি। তামিমের সঙ্গে থাকা ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল পরে জানান, ওই সময় তামিমের মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছিল এবং হৃৎস্পন্দন ছিল না কোনো। হাসপাতালে আনার পর তাই তামিমকে ‘ডিসি শক’ দেওয়া হয়।

ততক্ষণে বিসিবিতে চলে যায় তামিমের অসুস্থতার খবর। এদিন ১৯তম সাধারণ সভার জন্য সকাল থেকেই বিসিবি কার্যালয়ে আসতে থাকেন বোর্ড পরিচালকরা। তবে তামিমের হার্ট অ্যাটাকের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত করা হয় বোর্ড সভা। হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন বিসিবি কর্মকর্তারা।

খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই দেশের ক্রিকেট সম্প্রদায়ে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। তামিমের খবর জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন সবাই। দেশের ক্রিকেটাররা তো বটেই দেশের বাইরেরও অনেক ক্রিকেটার তামিমের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দেন।

দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে আনার পর এনজিওগ্রাম করানো হয় তামিমের। এতে তার ‘লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারি’তে শতভাগ ব্লক ধরা পড়ে। এটি একইসাথে হৃৎপিণ্ডের সামনে ও নীচের সারফেসে রক্ত সঞ্চালন করে। এই আর্টারির ব্লক যে কোনো মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, তামিমের যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের কাছে এর ডাক নাম ‘দা উইডো মেকার।’ অর্থাৎ এমন হার্ট অ্যাটাক কারও স্বামীর হলে ওই নারীর বিধবা হওয়ার শঙ্কা অনেক।

গুরুতর অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেন্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তখনও হাসপাতালে এসে পৌঁছাতে পারেননি তামিমের পরিবারের কোনো সদস্য। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে অপারেশনের সম্মতিপত্রে সাক্ষর দেন ম্যাচ রেফারি দেবব্রত।

কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে তামিমের রক্তনালীর ওই ব্লকে সফল স্টেন্টিং করানো হয়। তবে তখনও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হননি দেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার। তাই হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তামিমকে।

পরে সংবাদমাধ্যমে হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর চিকিৎসক রাজীব হাসান বলেন, আপাতত পর্যবেক্ষণে থাকবেন তামিম। এই সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেন চিকিৎসক।

ততক্ষণে হাসপাতালে চলে আসেন তামিমের পরিবারের সদস্যরা। সফলভাবে স্টেন্টিং করানোর পর থেকে পুরোটা সময় তার কাছে থাকেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবালও সিসিইউয়ের কাছাকাছি থাকেন।

এছাড়া বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক মাহবুব আনাম, নাজমুল আবেদীন, আকরাম খান, মঞ্জুর আলমরাও হাসপাতালে চলে আসেন। তামিমের কাছের বন্ধুদেরও দেখা যায় উৎকণ্ঠিত।

স্টেন্টিংয়ের প্রায় ঘণ্টাদুয়েক পর জ্ঞান ফেরে তামিমের। তখন চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরি সিসিইউ থেকে বেরিয়ে এই খবর জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, আপাতত কিছুটা সুস্থ তামিম। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দুঃসংবাদ পাওয়ার পর অধিনায়ককে ছাড়াই পুরো ম্যাচ খেলে মোহামেডান। শাইনপুকুরকে ২২৩ রানে অলআউট করে ৭ উইকেটের জয় পায় তারা। তামিমের অনুপস্থিতিতে ওপেনিং নেমে ৮৬ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতান মেহেদী হাসান মিরাজ।

ম্যাচ শেষ করে হাসপাতালে চলে আসেন মোহামেডানে তামিমের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা। সিসিইউতে প্রবেশ করে তামিমের সঙ্গে দেখা করেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক।

পরে এক বিবৃতিতে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ায় কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। একইসঙ্গে পরিবারের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালে ভক্ত-সমর্থকদের হাসপাতালে ভিড় না জমাতেও অনুরোধ করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email[email protected]
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram